Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ১ মে ২০২৫

রেমিট্যান্সের জোয়ার

রিজার্ভ ছাড়ালো ২৭ বিলিয়ন ডলার

রিজার্ভ ছাড়ালো ২৭ বিলিয়ন ডলার
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। টানা পতনের পর প্রায় বিশ মাসের ব্যবধানে দেশীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের ইতিবাচক মাইলফলক ছুঁয়েছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশের মোট রিজার্ভ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে, যা সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, বুধবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, আইএমএফের বিপিএম-৬ মানদণ্ডে রিজার্ভের পরিমাণ ২২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ হিসাবে এটি ২৭ বিলিয়নের ঘর ছাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, অর্থপাচার হ্রাস, প্রবাসী আয়ের ধারা এবং রফতানি প্রবৃদ্ধির সমন্বিত ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার দীর্ঘদিন ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকাটাও এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।

রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড

চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ২৯ দিনেই দেশে ২৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে মার্চ মাসে এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড গড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রতিটি মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হুন্ডি রোধে নজরদারি বৃদ্ধি, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা এবং আইটি ভিত্তিক ট্র্যাকিং ব্যবস্থার ফলে এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।

রফতানি বাড়ছে, রিজার্ভে পড়ছে প্রভাব

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক খাতে বাজার বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজারে প্রবেশের ফলে রফতানিতে ইতিবাচক গতি এসেছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসী আয়ে উল্লম্ফনের জোড়া প্রভাবেই রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ড. আলী হোসেন খান বলেন, রিজার্ভ যদি ৩০ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছায় এবং তা ধরে রাখা যায়, তবে বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা কমবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।

নিট রিজার্ভ ও আমদানি সক্ষমতা

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে নিট রিজার্ভ (ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ) প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা দিয়ে তিন মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি অনুযায়ী একটি নিরাপদ সীমা বলে ধরা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে এবং রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেয়, যা বাজারে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

অর্থনীতিবিদ ড. নুরুন নবী বলেন, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় যে কৌশলগত পরিবর্তন এসেছে, সেটি রিজার্ভ বৃদ্ধির পথ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রফতানি খাতে উদ্ভাবন, প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।

রিজার্ভ বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ

তবে রিজার্ভ বাড়লেও অর্থনীতি এখনও কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি—যেমন বৈদেশিক দেনার পরিশোধ, উন্নয়ন প্রকল্পে ডলারভিত্তিক ব্যয় এবং মূল্যস্ফীতি। 

বিশ্লেষকদের মতে, কেবল রিজার্ভ বৃদ্ধিই নয়, সেটি স্থিতিশীল রাখা ও ব্যয়ের যথাযথ ব্যবস্থাপনা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

সবার দেশ/কেএম