দুদকের অনুসন্ধান
সাকিবের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৬ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের তফসিলভুক্ত এ মামলাটি বর্তমানে যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিলহানুর রহমান নাওমী দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনে সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সোনা চোরাচালান, নিষিদ্ধ জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেটে দুর্নীতি এবং নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট এবং দালিলিক তথ্যের ভিত্তিতে উত্থাপিত। যাচাই-বাছাই কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আশঙ্কা, সাকিব আল হাসান দুদকের আসামিও হতে পারেন। এটি অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
নির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সাকিব তার ব্যবসায়িক অংশীদার রাশেক রহমানের সঙ্গে রিলায়েবল কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও বুরাক কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া, ২০১৬ সালে সাতক্ষীরার দাতিনাখালী এলাকায় সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, সাকিবের শেয়ারবাজার কারসাজির অভিযোগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তদন্ত করেছে। তবে সাকিবকে শাস্তি দেয়া হয়নি, যদিও তার সহযোগীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সাকিবের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জুয়া প্রতিষ্ঠান ‘বেট উইনার’ এবং ‘ওয়ানএক্সবেট’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে। ২০২২ সালে তিনি ‘বেট উইনার’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন এবং ২০২৪ সালে ‘ওয়ানএক্সবেট’-এর বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। এ অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি অপরাধলব্ধ আয় অর্জন করেছেন বলে দাবি করা হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাকিবের দেওয়া হলফনামায় তার বার্ষিক গড় আয় ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমানো অর্থ ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ছিলো। এছাড়া তার কাছে ২৪ হাজার ২৬১ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে। এ সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা দুদকের অনুসন্ধানের অংশ।
উল্লেখ্য, সাকিব আল হাসান ২০১৮ সালে দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং একটি তথ্যচিত্রে অংশ নিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের কারণে তিনি নিজেই দুদকের তদন্তের মুখোমুখি। এ ঘটনা দেশের ক্রীড়াঙ্গন এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সাকিব বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে এখনো এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, অনুসন্ধানের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে এ মামলা আইনি পদক্ষেপের দিকে এগোতে পারে। দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
সবার দেশ/কেএম