ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি
আমেরিকায় আত্মগোপনে বাংলাদেশিরা!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর অভিবাসন নীতি কার্যকর শুরু হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটির ওপর।
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে, বিশেষ করে যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই বা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
আত্মগোপন ও কর্মচারী সংকট
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথোপকথনে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে অনেকে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযানের ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী জানান, বৈধ কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশিরা বেশিরভাগই বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ ও দোকানে কাজ করেন। কিন্তু নীতি ঘোষণার পর অনেকে কাজে ফিরছেন না, ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী সংকট তীব্র হয়েছে। কেউ কেউ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ নিচ্ছেন, আবার কেউ দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি ও বাংলাদেশিদের ঝুঁকি
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির মধ্যে রয়েছে ব্যাপক বহিষ্কার অভিযান, ত্বরিত বহিষ্কার প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ, এবং স্কুল, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থানের মতো সংবেদনশীল এলাকায় আইসিই অভিযানের অনুমতি। এছাড়া, একটি নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের নিবন্ধন করতে বাধ্য করা হচ্ছে, অন্যথায় গ্রেফতার ও বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি মইন চৌধুরী জানিয়েছেন, নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, এবং কানেকটিকাটে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংলাদেশি এই বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি প্রবাসীদের কাগজপত্র আপডেট রাখতে এবং আইনজীবীর পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশি প্রবাসীদের আইনি প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। মইন চৌধুরী সতর্ক করে বলেছেন, দীর্ঘদিন (১০ মাসের বেশি) বিদেশে থাকলে গ্রিন কার্ডধারীদেরও স্থায়ী বসবাসের অধিকার হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান বহিষ্কারের হার অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে আরও কয়েকশ বাংলাদেশি ফেরত পাঠানো হতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এ নীতির প্রভাবে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে শুধু আতঙ্কই নয়, অর্থনৈতিক অস্থিরতাও দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশি মালিকানাধীন ব্যবসায় কর্মচারী সংকটের কারণে সেবার মান ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এ পরিস্থিতি কমিউনিটির মধ্যে সংহতি ও আইনি সচেতনতা বাড়াতে পারে। তবে, বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে, যাতে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়াটি সম্মানজনক হয়।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আত্মগোপনে থাকা বাংলাদেশিরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মুখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে আইনি পদক্ষেপ এবং কূটনৈতিক সমাধানই এ সংকট মোকাবিলার পথ হতে পারে।
সবার দেশ/কেএম