চিঠি দিয়ে জানালো বিশ্ববিদ্যালয়
তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া
তুরিন আফরোজের ভুয়া ডক্টরেট, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিস্ফোরক তথ্য: ক্ষমতার অপব্যবহারে বিতাড়িত হন মা!

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর এবং একাধিক আলোচিত-সমালোচিত মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW) নিশ্চিত করেছে, তুরিন আফরোজ কখনোই তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেননি। অর্থাৎ তিনি একটি ভুয়া পিএইচডি দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত করে এসেছেন।
এ সংক্রান্ত লিখিত প্রমাণ আজ রোববার আপিল বিভাগে উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার। ইমেইল মারফত ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ নামে আমাদের ডেটাবেইসে কোনো পিএইচডি ডিগ্রিধারীর তথ্য নেই।
তথ্যটি এসেছে একটি পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে, যেখানে তুরিন আফরোজ তার মা শামসুন্নাহার বেগম ও ভাই শাহনেওয়াজকে উত্তরার একটি পাঁচতলা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মামলাটির শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে তুরিন তার মাকে নিজের বাসভবন থেকে বিতাড়িত করেছিলেন।
সম্পত্তি বিরোধ: মা-বোনের মধ্যে আইনি লড়াই
মামলার ইতিহাস বলছে, ২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ তার মা ও ভাইকে উত্তরার বাড়ি থেকে বের করে দেন। অথচ ওই বাড়িতে ২০০২ সাল থেকেই তারা বসবাস করে আসছিলেন। এরপর উভয় পক্ষ আলাদা আলাদা দেওয়ানি মামলা করেন ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে।
তুরিনের দাবি, বাড়িটি তার বাবা তসলিম উদ্দিন ১৯৯৪ সালে তাকে হেবা করেছিলেন। কিন্তু তার মা ও ভাই আদালতে লিখিতভাবে জানান, ১৯৯৭ সালে শামসুন্নাহার নিজেই ছেলেকে হেবা করেন এবং ১৯৯৯ সালে সে জমির নামজারি হয়, এমনকি হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়: মা ও ভাইয়ের পক্ষে, তুরিনের বিরুদ্ধে ধাক্কা
এ মামলায় দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘স্থিতাবস্থা’ আদেশ বাতিল করে রায় দেন। ফলে আইনগতভাবে এখন তুরিন আফরোজের মা ও ভাই তাদের উত্তরার বাড়িতে বসবাস করতে পারবেন।
ব্যারিস্টার অনীকের বিস্ফোরক মন্তব্য
শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তুরিন আফরোজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে মা ও ভাইকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করেছেন। একজন ‘পরাক্রমশালী প্রসিকিউটর’ হিসেবে বিচার ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তিনি। আজ আদালত সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে: ভুয়া পিএইচডি দিয়ে কী কী সুবিধা নিয়েছেন তুরিন?
তুরিন আফরোজ এক সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের পরিচিতিতে বরাবরই ‘ড. তুরিন আফরোজ’ ব্যবহার করতেন। আজ যখন প্রমাণ হলো এ ডিগ্রি ভুয়া, তখন প্রশ্ন উঠেছে—এ ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে তিনি কীভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করলেন? কাদের অনুমোদনে? এবং কোন কোন সুবিধা তিনি নিয়েছেন?
এ ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির নয়, বরং গোটা বিচার ব্যবস্থার নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত ও পরিবার—সবকিছুতেই এক নারীর ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার করাল ছায়া ফেলেছে।
সবার দেশ/কেএম