আদালতের দ্বারস্থ মুনির আহমেদ
পাকিস্তানি তরুনীকে বিয়ের জেরে বরখাস্ত ভারতীয় পুলিশ

পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়ে করার অভিযোগে ভারতের আধাসামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) থেকে বরখাস্ত হয়েছেন কাশ্মিরি জওয়ান মুনির আহমেদ।
বরখাস্তের কয়েক ঘণ্টা পর তিনি জানান, যথাযথ অনুমতি নিয়েই বিয়ে করেছিলেন তিনি, এবং এ ঘটনায় তিনি আইনি লড়াইয়ে যাবেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, জম্মুর ঘারোটা এলাকার বাসিন্দা মুনির ২০১৭ সালের এপ্রিলে সিআরপিএফ-এ যোগ দেন। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই সামনে আসে মুনিরের সঙ্গে পাকিস্তানি নাগরিক মিনাল খানের বিয়ের খবর।
বরখাস্তের পেছনে কী ছিলো?
সিআরপিএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিনাল খানের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে নিজ বাসায় রাখেন মুনির। বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বাহিনীটির দাবি, এর মাধ্যমে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
তবে মুনির আহমেদ দাবি করেছেন, তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নিজের বিয়ের পরিকল্পনার কথা কর্তৃপক্ষকে জানান এবং প্রাসঙ্গিক সব কাগজপত্র জমা দেন। ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল সদর দফতরের অনুমোদনও পান তিনি। তিনি জানান, ২০২৩ সালের ২৪ মে আমাদের বিয়ে হয় ভিডিও কলে। এরপর আমি নিকাহনামা ও বিবাহ সনদ জমা দিই।
ভিসা, আদালত ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
মিনাল খান ভারতে এসেছিলেন ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৫ দিনের স্বল্পমেয়াদি ভিসায়। ২২ মার্চ মেয়াদ শেষ হলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে আদালত শেষ মুহূর্তে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে, এবং বর্তমানে মিনাল তার স্বামীর সঙ্গে জম্মুতে অবস্থান করছেন।
মুনিরের দাবি, তিনি দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। কিন্তু তার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আসে হঠাৎ করেই, যখন তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদানের প্রক্রিয়ায় ছিলেন।
আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা
বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায় ও অসম্মানজনক’ বলে উল্লেখ করে মুনির আহমেদ বলেন, আমি আদালতে যাবো এবং ন্যায়বিচার পাবো বলেই আশাবাদী। তার বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারকে যথাযথভাবে অবহিত করেই তিনি বিয়ে করেন এবং কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি।
একদিকে জাতীয় নিরাপত্তা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের টানাপোড়েন এ ঘটনার কেন্দ্রে। প্রশ্ন উঠছে—একজন জওয়ান যদি সিস্টেম মেনে বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করে, তবুও কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে?
মুনির আহমেদের আইনি লড়াই কী তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেবে, নাকি এটি হয়ে উঠবে ভারতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের দ্বন্দ্বের আরেকটি আলোচিত অধ্যায়?
সবার দেশ/কেএম