Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৪ মে ২০২৫

১৬৮২০ কোটি ডলারের মালিকের পুরো সম্পদ দান!

১৬৮২০ কোটি ডলারের মালিক, অথচ এখনও থাকেন ৩১,৫০০ ডলারের পুরনো বাড়িতে—ওয়ারেন বাফেট দান করে যাবেন তার প্রায় সব সম্পদ!

১৬৮২০ কোটি ডলারের মালিকের পুরো সম্পদ দান!
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি, ‘ওরাকল অব ওমাহা’ খ্যাত ওয়ারেন বাফেট ঘোষণা দিয়েছেন, জীবদ্দশাতেই তিনি তার অর্জিত ১৬৮২০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রায় সম্পূর্ণ সম্পদ জনহিতকর কাজে দান করবেন। 

৯৪ বছর বয়সী এ বিনিয়োগ-চমৎকারি এত বছর ধরে যেমন বিনয়ী ছিলেন, তেমনি তার সম্পদ বণ্টনের সিদ্ধান্তও রীতিমতো বিস্ময়কর।

শুধু সম্পদ নয়, বিলাসিতার হাতছানি থেকেও দূরে

বিশ্বের অন্যান্য বিলিয়নেয়ারদের মত চমকপ্রদ প্রাসাদ বা প্রাইভেট দ্বীপ নয়, বাফেটের ঘর এখনো সে ১৯৫৮ সালে কেনা ওমাহার একটি সাদামাটা বাড়ি—যার দাম ছিলো মাত্র ৩১,৫০০ ডলার। ফাস্টফুডপ্রেমী এ মানুষটি আজও প্রতিদিন পান করেন পাঁচ ক্যান কোকাকোলা, পছন্দের খাবার ম্যাকডোনাল্ডসের চিকেন ম্যাকনাগেটস এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি

ওয়ারেন বাফেটের মালিকানাধীন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এখন একটি বাণিজ্য সাম্রাজ্য। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছে ডুরাসেল ব্যাটারি, বীমা সংস্থা গেইকো, রঙের ব্র্যান্ড, হীরা, এমনকি অ্যাপল ও কোকাকোলা-র মত শেয়ার অংশীদারিত্ব।

সম্প্রতি এক ঘোষণায় বাফেট জানান, এ বছরের শেষ নাগাদ তিনি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তার দীর্ঘদিনের সহযোগী ও ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেগ অ্যাবেল হবেন নতুন CEO।

দানশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত

২০০৬ সালে বাফেট প্রথম ঘোষণা দেন, তিনি তার সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করে যাবেন জনকল্যাণে। তখন থেকেই তিনি প্রতি বছর বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন জনহিতকর সংস্থায় বিশাল অঙ্কের অনুদান দিয়ে আসছেন। সে বছরই গড়ে তোলেন ‘The Giving Pledge’—যেখানে বিলিয়নেয়ারদের আহ্বান জানানো হয় অন্তত অর্ধেক সম্পদ দান করতে। বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ইলন মাস্কসহ অনেকেই এ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।

নিরহঙ্কার জীবন, তীব্র মনোবল

বাফেট তার শৈশবকে বর্ণনা করেছেন কঠিন সময় হিসেবে। মা ছিলেন কঠোর, প্রায়শই নির্যাতন করতেন। পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছাও হয়েছিলো তার। কিন্তু বাবা হাওয়ার্ড বাফেট, যিনি নিজে একজন রাজনীতিক ও কংগ্রেস সদস্য ছিলেন, ছেলের ভবিষ্যতের বিষয়ে আপসহীন ছিলেন।

নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যেখানে তার গুরু ছিলেন বিখ্যাত বিনিয়োগ তাত্ত্বিক বেঞ্জামিন গ্রাহাম।

ধীর অথচ দৃঢ় ব্যবসায়ী দর্শন

১৯৬৫ সালে বাফেট অধিগ্রহণ করেন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে নামের তখনকার একটি ক্ষয়িষ্ণু টেক্সটাইল কোম্পানি। ধীরে ধীরে সেটিকে পরিণত করেন এক বহুজাতিক বাণিজ্য-জায়ান্টে।

তার বিনিয়োগ কৌশল ছিলো ‘মূল্যনির্ধারিত বিনিয়োগ’—মানে এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা, যার প্রকৃত মূল্য বাজারমূল্যের তুলনায় বেশি। বাফেট বলেন, সফল বিনিয়োগ মানে সময়, ধৈর্য এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ।

সাধারণ মানুষ, অসাধারণ দর্শন

সাদামাটা পোষাক, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে উকুলেলে, ব্রিজ খেলার শখ—এই মানুষটি কখনও জেটসেটার বা গ্ল্যামারিক আইকন হননি। বরং, নিজের অবস্থান থেকে কর আরও বেশি নেওয়া উচিত—এমন কথা অকপটে বলতেও দ্বিধা করেননি।

ব্যক্তিজীবনের গল্প

১৯৫২ সালে বিয়ে করেন সুসান বাফেটকে, যিনি পরবর্তীতে একজন সঙ্গীতশিল্পী ও সমাজকর্মী হয়ে ওঠেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। যদিও এ দম্পতি জীবনের একপর্যায়ে আলাদা থাকতেন, তবে ২০০৪ সালে সুসানের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক অটুট ছিলো। পরে, ২০০৬ সালে বিয়ে করেন দীর্ঘদিনের সঙ্গী অ্যাস্ট্রিড মেনকসকে।

এক নজরে ওয়ারেন বাফেটের জীবনচিত্র

  • জন্ম: ১৯৩০, ওমাহা, নেব্রাস্কা
  • শৈশবে বই পড়ে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ
  • ১৯৫১ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স
  • ১৯৬৫ সালে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে অধিগ্রহণ
  • বিনিয়োগ করেছেন Apple, Coca-Cola, Chevron, AmEx, Citigroup-এর মতো জায়ান্টদের মধ্যে
  • বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভা ‘উডস্টক ফর ক্যাপিটালিস্টস’ নামে খ্যাত

ওয়ারেন বাফেটের জীবন যেমন ব্যবসায়িক কৌশলের পাঠ, তেমনি এটি বিনয়ের, দায়বদ্ধতার, এবং মানবিকতা বজায় রাখার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। একবিংশ শতাব্দীর ভোগবাদী সমাজে তিনি দেখিয়ে দিলেন—ধনবান হওয়া মানেই বিলাসী হওয়া নয়। অন্যরকম জীবনযাপন, বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ আর নিঃস্বার্থ দান—এ তিনের মিশ্রণেই গড়ে উঠেছে ওয়ারেন বাফেটের জীবন-চরিত্র।

সবার দেশ/কেএম

সম্পর্কিত বিষয়: