শরীয়ত ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ
নারী সংস্কার কমিশনের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট!

বাংলাদেশে নারী অধিকার ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সংবেদনশীল সমন্বয় নিয়ে ফের উত্তাল বিতর্ক। ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট, ২০২৫’–এ অন্তর্ভুক্ত কিছু সুপারিশকে ইসলামী শরীয়ত এবং সংবিধানসম্মত ধর্মচর্চার অধিকারের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। আবেদনটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রওশন আলী।
রিটে বলা হয়েছে, রিপোর্টের অধ্যায় ১১-তে নারী ও পুরুষের জন্য সমান উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ স্পষ্টতই কোরআনের সুরা নিসার (৪:১১) নির্দেশনার পরিপন্থি। একইসঙ্গে বহুবিবাহ নিষিদ্ধের প্রস্তাব, ‘My Body, My Choice’ স্লোগানে অন্ধ সমর্থন, যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে বৈধতা দেয়া, এবং ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ধর্মীয় বিধান ও সমাজের নৈতিক কাঠামোতে ‘ধর্মঘাতী আঘাত’ হানে।
রিপোর্টের ছয়টি অধ্যায় নিয়ে মূল আপত্তি
রিটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অধ্যায় ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ ও ১২-তে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস ও চর্চাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অ্যাডভোকেট রওশন আলীর মতে, এ রিপোর্ট সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে আঘাত করে।
আইনি কাঠামোয় বিতর্ক: সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ
রিট আবেদনে সংবিধানের ৪১(১) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ধর্মচর্চার স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিক ধর্মীয় বিশ্বাস, পালন ও প্রচারে স্বাধীন। রিটের ভাষ্য অনুযায়ী, উইমেন রিফর্ম কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি এ সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।
বিবাদীগণ ও বিচারিক প্রেক্ষাপট
রিটে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং উইমেন রিফর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান-কে বিবাদী করা হয়েছে। বিষয়টি বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে উপস্থাপিত হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহেই শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রতিক্রিয়ায় বিভক্ত সমাজ ও নীতিনির্ধারকরা
নারী অধিকার সংগঠনগুলো রিপোর্টটির পক্ষ নিয়ে বলছে, এ সুপারিশগুলো বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রাথমিক রূপরেখা মাত্র। তবে ধর্মীয় নেতারা বলছেন, আধুনিকতার নামে শরীয়তের মৌলিক বিধান নিয়ে হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
সবার দেশ/কেএম