জুলাই সনদে স্বাক্ষরে সব দলের নাম কমিশনের হাতে

আগামী ১৭ অক্টোবর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’-এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকালে হবে এ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান, যেখানে উপস্থিত থাকবেন দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে সনদ স্বাক্ষরের দিন চূড়ান্ত করা হয়। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সপ্তাহান্তের দিনই অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস আজ রোববার ইতালির রোম যাচ্ছেন ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে যোগ দিতে। তিনি দেশে ফিরবেন বুধবার, এরপর শুক্রবারই অনুষ্ঠিত হবে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।

কমিশনের নির্দেশে শনিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে স্বাক্ষরকারীদের নাম পাঠাতে বলা হয়েছিলো। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টিসহ সংশ্লিষ্ট সব দলই প্রতিনিধিদের নাম পাঠিয়েছে।

বিএনপি পক্ষ থেকে স্বাক্ষরের জন্য মনোনীত হয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। জামায়াতে ইসলামী মনোনীত করেছে নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে। এনসিপির প্রতিনিধি হিসেবে থাকছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য-সচিব আখতার হোসেন।

নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে সই করবেন সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার। গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে থাকবেন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান রুবেল। এবি পার্টির পক্ষ থেকে সই করবেন চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

গত ১১ সেপ্টেম্বর পরিবর্তন ও পরিমার্জনের পর ঐকমত্য কমিশন ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে পাঠিয়েছিলো জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য। দলগুলোকে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুজন করে স্বাক্ষরকারীর নাম দিতে বলা হয়েছিলো। সে সময় বিএনপিসহ ১৫টি দলই নাম পাঠিয়েছিলো।

তবে সনদের কিছু সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বিশেষ করে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি, এবং সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে দলগুলোর মধ্যে। বিএনপি উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের অনুপাত বিবেচনার পক্ষে, অপরদিকে জামায়াতসহ কয়েকটি দল উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

কমিশন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এ দুই বিতর্কিত বিষয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত না রেখে তা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এতে করে কমিশন কৌশলী অবস্থান নেবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, দলগুলোর অভিমত বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব ও চূড়ান্ত সনদের কপি সরকারের হাতে তুলে দেয়া হবে। সনদের কপি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকেও পাঠানো হবে।

জাতীয় ঐকমত্য ও সাংবিধানিক সংস্কারের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে জুলাই সনদ–২০২৫–এর স্বাক্ষরকে, যা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সবার দেশ/কেএম