টানা জবানবন্দিতে নতুন তথ্য উন্মোচিত
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাসনাত
জুলাই আন্দোলনের ‘প্রথম শহীদ’ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা–সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে পৌঁছেছে সাক্ষ্যগ্রহণ।
এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ উপস্থিত হয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ তার জবানবন্দি গ্রহণ করছে। তিনি মামলার ২২ নম্বর সাক্ষী।
এ মামলায় বর্তমানে এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজসহ মোট ছয়জন গ্রেফতার রয়েছেন। বাকি ২৪ জন আসামি এখনও পলাতক; তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত চারজন আইনজীবী কাজ করছেন।
গত ২৭ নভেম্বর ২১ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। তার আগে ২৪ নভেম্বর এক পুলিশ কর্মকর্তার জবানবন্দি গ্রহণের কথা থাকলেও বিশেষ কারণে তা নেয়া হয়নি। ২৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেয়া শিক্ষার্থী জানান, আবু সাঈদ আহত হওয়ার পর তিনিই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং পরে পুলিশ কীভাবে তার লাশটি ‘ছিনিয়ে নেয়’, তা তিনি আদালতে বর্ণনা করেন। তার আগের দিন সাক্ষ্য দেন শিক্ষার্থী শান-এ রওনক বসুনিয়া, যিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
১৬ নভেম্বর মিঠাপুকুর থানার ওসি মো. নূরে আলম সিদ্দিক জবানবন্দি দিয়ে ১৬ জুলাইয়ের ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দেন। ১৩ নভেম্বর পুলিশের নায়েক আবু বকর সিদ্দিক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে জানান, তৎকালীন আরিফুজ্জামান (এসি) এবং তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশেই গুলি চালানো হয়, যাতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১২ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন এসআই (সশস্ত্র) আশরাফুল ইসলাম। ১১ নভেম্বর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। ১০ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন জুলাই আন্দোলনের নেতা আকিব রেজা খান।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মাঝেমধ্যে ব্যাঘাত ঘটে। ৪ নভেম্বর, ২১ ও ১৩ অক্টোবর সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তিন দফা সময় পেছাতে হয়। ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা—এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল—জবানবন্দি দেন।
এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২৮ আগস্ট, আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দি দিয়ে। একই দিনে সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন। এর আগে ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে ২৪ জুন এবং ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়। মোট ৬২ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
এ মামলায় টানা সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে, যা জুলাই আন্দোলনের সবচেয়ে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়াকে জটিল ও নাটকীয় মোড় দিচ্ছে।
সবার দেশ/কেএম




























