মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যু

জধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে পড়ে এক পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের বরাত ও পুলিশের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, মেট্রোরেল লাইনের একটি পিলারের বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ খুলে নিচে পড়ে পথচারীর মাথায় আঘাত লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, 

নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মেট্রোরেল স্ট্রাকচারের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে ওই ব্যক্তি নিহত হন। ঘটনাস্থলে তদন্ত চলছে এবং নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ করে ওপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তের মধ্যে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া হলেও আর বাঁচানো যায়নি।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিয়ারিং প্যাড সাধারণত স্ট্রাকচারের সংযোগস্থলে কম্পন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো ভারী ধাতব ও রাবার মিশ্রিত উপাদান দিয়ে তৈরি। যদি এমন একটি অংশ খুলে পড়ে, তা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর প্রকৌশল বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছে এবং পুরো সেগমেন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। নগরবাসীর অভিযোগ, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মেট্রোরেলের কাজ চলাকালীন বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের সময় লোহার রড, নাট-বল্টু কিংবা কংক্রিটের টুকরা পড়ে বহু পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহী আহত হয়েছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা নগর ব্যবস্থাপনার ভয়াবহ ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে। মেট্রোরেলের মতো বড় অবকাঠামো প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হয়। প্রতিটি রুটে নিয়মিত ইন্সপেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণ না হলে, এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটবে।

দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, মেট্রোরেল চালুর পর থেকে ফার্মগেট এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। তবু নিচ দিয়ে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। কেউ কেউ জানান, পিলারের আশপাশে প্রায়ই লোহার টুকরা বা নাট-বল্টু পড়ে থাকতে দেখা যায়।

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়। তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, নিহতের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করছি, পাশাপাশি মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি।

অন্যদিকে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, তারা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তে যদি কোনো ত্রুটি বা অবহেলা পাওয়া যায়, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুর্ঘটনার পর পুরো এলাকাজুড়ে যানজট দেখা দেয়। পুলিশ মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে এবং বিকল্প রুটে যানবাহন চালাতে নির্দেশ দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, মানুষের মনে রয়ে গেছে আতঙ্ক ও ক্ষোভের ছাপ।

রাজধানীতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে একের পর এক দুর্ঘটনা আর প্রাণহানির ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে— উন্নয়নের এ কাঠামোর নিচে কতজনের জীবন দিতে হবে?

সবার দেশ/কেএম