Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩ মে ২০২৫

বিপিডিবির র‍্যান্ডম ক্যাপাসিটি টেস্টে বেসরকারি আইপিপিরা

তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘সক্ষমতা’ প্রশ্নের মুখে

তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘সক্ষমতা’ প্রশ্নের মুখে
ফাইল ছবি

বেসরকারি খাতের মালিকানাধীন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্রকৃত উৎপাদনক্ষমতা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। 

বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘদিনের আলোচিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বিতর্কের পর এবার প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর র‍্যান্ডম ক্যাপাসিটি টেস্ট চালু করছে সংস্থাটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এ টেস্টের আওতায় কোনও ধরনের আগাম নোটিস ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বাস্তবিক উৎপাদনক্ষমতা পরিমাপ করা হবে। যেসব কেন্দ্র বছরজুড়েই বিপিডিবিকে নিজেদের সক্ষমতার তথ্য দিয়ে আসছে, এবার দেখা হবে—সেসব তথ্য বাস্তবে কতটা সত্য।

দেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ: বিশাল সক্ষমতা, সীমিত ব্যবহার

বর্তমানে দেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ৫,৮৩১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র ৫,৫০০ মেগাওয়াট এবং ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র ২৯০ মেগাওয়াট। অথচ, জ্বালানি সংকট ও ব্যয়ের কারণে এখন এসব কেন্দ্রের বড় অংশই নিষ্ক্রিয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এ কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই এখন ব্যবহার হচ্ছে না, কিন্তু মাস শেষে তারা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ঠিকই নিচ্ছে।

কেনো ‘র‍্যান্ডম ক্যাপাসিটি টেস্ট’?

মূল উদ্দেশ্য—কেন্দ্রগুলো বাস্তবে কতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, তা যাচাই করা। আইপিপিরা নিয়মিতই বিপিডিবিকে জানায় যে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম। কিন্তু অনেক সময় সে উৎপাদন সম্ভব হয় না। তবুও চুক্তিভিত্তিক ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ ঠিকই চলে যাচ্ছে মালিকদের পকেটে।

এক শীর্ষ বিদ্যুৎ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রিডের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত রাখতে এ পরীক্ষা এখন সময়ের দাবি। চুক্তির শর্ত কতটা মানা হচ্ছে—তা নিশ্চিত করাই এখন মুখ্য।

বিতর্কিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট

তথাকথিত ক্যাপাসিটি পেমেন্টে কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ না করেও বিপিডিবির কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই এ ব্যবস্থাকে অপ্রয়োজনীয় ও জনস্বার্থবিরোধী বলছেন।

এ পরিস্থিতিতে যদি ক্যাপাসিটি টেস্টে দেখা যায়—কোনও কেন্দ্র তাদের চুক্তিকৃত সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, তাহলে সে চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনার দরজা খুলবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

কীভাবে চলবে টেস্ট?

বিদ্যুৎ বিভাগের ২৪ এপ্রিলের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, টেস্ট কার্যক্রমে কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে, যারা কেন্দ্রগুলোতে আকস্মিকভাবে পরীক্ষা চালাবে। কাগজে-কলমে থাকা সক্ষমতা বাস্তবে কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদনে রূপ নিতে পারে, তা যাচাই করাই হবে তাদের প্রধান কাজ।

এটি নিছক একটি কারিগরি পরীক্ষা নয়। বরং এটি বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, জনস্বার্থ উপেক্ষা, এবং লুটপাটমূলক ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রশাসনের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকে।

যদি এই র‍্যান্ডম টেস্ট কার্যকরভাবে চালানো হয় এবং ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়, তাহলে বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে।

সবার দেশ/কেএম

সম্পর্কিত বিষয়: