কাশ্মিরে উত্তেজনা
ভারতকে হুঁশিয়ার করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে সরাসরি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, পাকিস্তানকে দোষারোপের আগে যেন যথাযথ প্রমাণ সামনে আনা হয় এবং উসকানিমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকা হয়। কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যখন নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, ঠিক তখনই হস্তক্ষেপ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে রয়টার্স ও টিআরটি গ্লোবালের বরাতে জানা যায়, মার্কো রুবিও আলাদাভাবে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে। উভয় পক্ষকে তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনালাপে মার্কো রুবিও বলেন, পেহেলগামে হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে ভারতের পাশে রয়েছে। তবে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে অবশ্যই তথ্যভিত্তিক ও সতর্ক থাকতে হবে।
রুবিওর মন্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ভারত এ পর্যন্ত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করেনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে আলাপেও রুবিও শান্তি ও সহযোগিতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এ অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানের উচিত পূর্ণ সহযোগিতা করা। জবাবে শেহবাজ বলেন, ভারতের উসকানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং এটি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে।
শেহবাজ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাই যেনো তারা ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করে।
পেহেলগাম হামলার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। ভারত ইতোমধ্যেই ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে, সীমান্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ করেছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং পাকিস্তানের দূতাবাসে থাকা সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করেছে।
এর জবাবে পাকিস্তান ভারতের এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে উত্তর আমেরিকা থেকে ভারতের ফ্লাইটগুলো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ভারতের নাগরিকদের ভিসাও বাতিল করা হয়েছে (শুধুমাত্র শিখ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সফরের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম)। সেসঙ্গে ভারতের সঙ্গে সকল ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ এবং ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তিও স্থগিত করেছে ইসলামাবাদ।
একের পর এক উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের কূটনীতিকরা দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি সামরিক সংঘাত এড়াতে তৎপর হয়েছেন। তবে উভয় দেশের কড়া অবস্থান এবং জাতীয়তাবাদী আবেগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রুবিওর সতর্কবার্তা এখন শুধু কূটনৈতিক বার্তা নয়—এটি একটি সরাসরি কৌশলগত বার্তাও, যার উদ্দেশ্য ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই তা ঠেকানো।
সবার দেশ/কেএম