ভিডিও ভাইরাল, ‘ভণ্ডামি’র অভিযোগে ইরানে তোলপাড়
খোলামেলা পোশাকে খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের বিয়ে
ইরানে কঠোর হিজাব আইন প্রয়োগের পক্ষে থাকা শাসকগোষ্ঠী নিজেরাই এখন সে আইনের ফাঁদে পড়ে সমালোচনার মুখে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সচিব অ্যাডমিরাল আলি শামখানির মেয়ের বিয়ের ভিডিও ফাঁস* হয়ে গেলে সেটি দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, তেহরানের বিলাসবহুল এস্পিনাস প্যালেস হোটেলে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠানে আলি শামখানি নিজের মেয়ের হাত ধরে বর-এর দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন। নববধূ ফাতেমা শামখানি পরেছেন পাশ্চাত্য ধাঁচের স্ট্র্যাপলেস (কাঁধ খোলা) সাদা বিয়ের গাউন—যেখানে মাথায় কোনো ওড়না নেই। পাশে থাকা শামখানির স্ত্রীও ছিলেন নীল লেইসের গাউনে, পিঠ ও কাঁধ খোলা, মাথাতেও কোনো স্কার্ফ ছিলো না।
ভিডিওটি ১৭ অক্টোবর সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে (সাবেক টুইটার) ফাঁস হওয়ার পর ইরানজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বহু ব্যবহারকারী এ ঘটনাকে দেশের ইসলামি শাসকদের ‘চরম ভণ্ডামি’র উদাহরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
একজন এক্স ব্যবহারকারী লেখেন, যদি ভণ্ডামি না থাকত, তাহলে এমন অনুষ্ঠানের এত গোপনীয়তার দরকার হতো কেনো?
ইরানের রক্ষণশীল মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অতিরক্ষণশীল রাজনীতিক আলি আকবর রায়েফিপুর এক্সে লিখেছেন,
জনগণকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কষ্ট সহ্য করতে বলা হয়, অথচ সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিজের মেয়ের বিয়ে দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলে করেন—এটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য?
জানা গেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ওই বিয়ের ভিডিওটি সম্প্রতি ফাঁস হয়। তাতে শামখানিকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে দেখা যায়, যিনি ২০২২ সালের হিজাববিরোধী আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে নারীদের ওপর দমননীতি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান ছিলেন এবং হিজাব আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন।
এবার সে শামখানির নিজের মেয়ের বিয়েতে নারী সদস্যদের খোলামেলা পোশাক—যা ইরানের কঠোর ধর্মীয় বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ফলে সাধারণ ইরানিদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
তবে সমালোচনার মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার সাবেক প্রধান এজাতোল্লাহ জারগামি শামখানির পক্ষ নিয়ে দাবি করেছেন, এটি ছিলো নারীদের জন্য নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান, যেখানে শামখানি শুধু মেয়েকে বর-এর দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। উপস্থিত নারীদের কেউ কেউ পর্দা করেছিলেন, বাকিরা ছিলেন মাহরাম (ঘনিষ্ঠ আত্মীয়)।
তিনি আরও অভিযোগ করেন,
ভিডিওটি ইসরায়েল ফাঁস করেছে। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হ্যাক করে অপমান করা এখন ইসরায়েলের নতুন কৌশল।
তবে এ ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ অনেক ইরানি লিখেছেন, যাদের হাতে নারীরা নিহত, তারা নিজেরা বিলাসবহুল হোটেলে মেয়েদের খোলামেলা পোশাকে বিয়ে দেন—এটাই আজকের ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বাস্তব চিত্র।
সবার দেশ/কেএম




























