Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ ড. লিপন মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০০:২৮, ৪ মে ২০২৫

উপন্যাস

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

আকাশ মেঘলা হলেও হাসে
ছবি: সবার দেশ

(পর্ব পনেরো)

আমি নিয়মিত বাজারে যাই না। মাঝে মাঝে সবজী ও গোস্ত কিনি। মাছ তেমনটা কিনতে পারি না, আমাকে ঠকিয়ে দেয়। আব্বা ও আম্মা সকালে বাজারে যান। সকালে ধানমন্ডি লেকের আশে পাশে সব পাওয়া যায়। আজ একটু ভোরে বেরিয়ে বাজারে গেলাম। কিছু সবজি কিনে বাসায় এলাম। আসা মাত্র এক কাপ চা আর টোস্ট বিস্কুট খেলাম। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ধানমন্ডি লেকে দুই তিন চক্কর দিয়ে ঘাম ঝরিয়ে বাসায় এলাম। খেয়াল করলাম আজকের রোদ অনেক কড়া, তবুও শীতের আমেজ আছে। আমার পায়ে ব্যাথা, প্রতিদিন বাসে যেতে হয় আবার ট্রেনে করে ফিরতে হয়। এ ফিরে আসা আরেক যুদ্ধ। লেকের পানি সবুজ হয়ে আছে, পুর্ব দিকের কড়া রোদ পানির উপরে ঝিলিক দিচ্ছে। পেয়ারা, ডাব ওয়ালারা বসে আছে, টি-শার্ট, জুতা মোজা, ওজন মাপা মেশিন সবই আছে। মধু, বাদাম নিয়ে বসে আছে বিক্রেতা। আর একটু ফাঁকা রেখে ফকির বসে আসে, মাঝে মাঝে ভাবি এ ছিন্নমূল দেখার কেউ কি নেই? 

প্রতিদিন সকালের মত আমরা দু’জন একসাথে বেরিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে যাই। আমি সেখানে নেমে পড়ি বাসের উদ্দেশ্যে। নামতেই দেখা হলো মিনহাজ ভাই এর সাথে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বড় ভাই, যিনিও টানবাজার অন্য একটা প্রাইভেট ব্যাংকে আছেন। আরো দেখা হয়ে গেলো, সরকারী ব্যাংকের এক নির্বাহী ও আমাদের বন্ধুর সাথে। সবাই যার যার মতো বাসা থেকে এসে কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। এরপর বাস এলে ধীরে ধীরে উঠতে থাকে। মোটামুটি সকালে কারও না কারোওসাথে দেখা হয়েই যায় প্রতিদিন। যথারীতি আমি ও আমার স্যার এক সাথে পাশাপাশি বসি। বুঝতে পারছি তিনি আমার শোনার জন্য আগ্রহী। ব্যাংকার বড় ভাই হালকা খোচা দিলেন? কী তেল দেবার জন্য এক সাথে বসছো নাকি? আমরা হেসে উড়িয়ে দিলাম। বাস ছেড়ে দিলো। এটা এক দিক দিয়ে ভালো, ভোরে গেলে বাস এক মিনিট দেরী করে না। আমি আবার বলা শুরু করলাম।

আমার ডাক্তার বন্ধুকে জানালে, সে আমাকে তার কাছে , চেম্বারে যেতে বললো। দেখে দেবে সেটাও বললো। আমি তাকে বললাম আমার তো হাঁটার কোন ক্ষমতা নেই। সে আমাকে বললো এমআরআই করাতে হবে, নাইলে বুঝতে পারবে না। তবুও সে আমাকে ওষুধের নাম লিখে মেসেজ করে দিলো। এখন সমস্যা হলো বাসায় আব্বা আর আম্মা ছাড়া কেউ নেই। কাকে দিয়ে আনাবো এ ওষুধ।

ভাবী আর আপনার ছেলে?
ওরা নানীর বাসায় গেছে।
আল্লাহর কি রহমত দেখেন সিলেট থেকে আমার মামা বেড়াতে এলেন আমাদের বাসায়। পরে মামাকে দিয়ে মেডিসিন কিনে আনালাম। খেলাম কিন্তু কাজ হলো না।
তাই?
জ্বী, স্যার।
এরপর কী করলেন?  
আমার না যাওয়া দেখে ড. সানিউল হক আমার বন্ধু আমাকে কল দিলো। আমি তাকে বললাম আমার ব্যাথা কমেনি, আমি বিছান থেকে নামতে পারছি না। সে আমাকে পরামর্শ দিলো, নড়াচড়া না করে শুয়ে থাকার জন্য। 

রাতেই আমার সহধর্মিনী এসে গেলো। আমার টেনশন কমে গেলো। মেয়ে মানুষ যা হয় আরকি, হৈ চৈ শুরু করে দিলো, কী কী করেছি সারাদিন শুনলো, কেন তাকে ডাকা হয়নি সে প্রশ্ন বাদ গেলো না, হট ওয়াটার বোতল দিয়ে শেক দেয়া শুরু করলো। আর বলতে শুরু করলো, ভারতে না গেলে হয় না। 
আমি দেখলাম শনিবার ও রোববার অফিসে না গেলে, বাসায় রেস্ট করলে আমি ভালো হয়ে যাবো। আমার লাম্বার ডিস্ক এ সমস্যা। টানা দুই দিন শুয়ে থাকলে এটা ঠিক হয়ে যাবে।

আমারও ব্যাক পেইন আছে। এটা ব্যাংকারদের একটা কমন রোগ।
স্যার বললেন।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। (চলবে,,,) 

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার