আবদুল হামিদের দেশত্যাগে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর খড়গ

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (এএসপি) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এছাড়া, এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় নয় মাস পর সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ত্যাগ করেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৭ মে দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ ফ্লাইটে তিনি ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। তবে, তার চূড়ান্ত গন্তব্য বা দেশত্যাগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশিত হয়নি।
আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় গত ১৪ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ওবায়দুল কাদেরের নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত না হলেও, এটি সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনাকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা সরকারের জবাবদিহিতার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী এ ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
দিনাজপুরে একই দিনে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছেন, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, জড়িতদের শুধু পদত্যাগ নয়, তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।
আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। একই দিনে গণ অধিকার পরিষদের আবু হানিফ দাবি করেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু রাতে দেশত্যাগ করতে পারেন। এ দাবি এবং আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। চুন্নুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, এবং তার সম্ভাব্য দেশত্যাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ ঘটনার সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ৪০-৫০ জন ভারতীয় সৈন্য হত্যা করেছে, যদিও ভারত এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এ আঞ্চলিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও, এটি অঞ্চলের সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার একটি অংশ।
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে, সরকার জবাবদিহিতা প্রমাণের চেষ্টা করছে; অন্যদিকে, জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তদন্তের অগ্রগতি এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা এ সংকট নিরসনের মূল চাবিকাঠি হবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে উন্মোচিত করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার এবং দুই কর্মকর্তার বরখাস্ত প্রাথমিক পদক্ষেপ হলেও, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত প্রয়োজন। এ ঘটনা এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সম্ভাব্য দেশত্যাগের দাবি সরকারের জন্য জটিল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
সবার দেশ/কেএম