উপন্যাস
আকাশ মেঘলা হলেও হাসে

(পর্ব ষোল)
আমার একটা কথা আছে।
কি কথা?
এই যে সবাই বলে ব্যাংকারদের চাকরী সারাদিন চেয়ারে বসে থাকা, তাই নাকি তাদের এ ব্যাক পেইন রোগ হয়। অন্যান্য চাকরী যারা করে তারাও তো চেয়ারে বসেই কাজ করে। তাদের কতজন দাঁড়িয়ে কাজ করে বলেন তো?
আমাদের অফিস টাইম অনেকের চাইতে বেশি, যাই হোক আমরা এটা নিয়ে পরে আলাপ করতে পারবো। এর পরে বলেন কি হলো।
রাতে একটা ঘুমের ওষুধ খেলাম, যাতে ঘুমটা ভালো হয় আর ব্যাথা যেন টের না পাই। কোন কিছুই কাজ হলো না, সকালে টের পেলাম ব্যাথা যা আছে তার চেয়ে কমেছে বলে মনে হলো না।
বলেন কি?
জ্বী, বিছানায় নাস্তা করেছি, এর পরে আমাদের ব্যাংকের ডাক্তারকে কল দিলাম, তিনি বললেন শুয়ে থাকেন আর যা মেডিসিন আছে চলতে থাকুক।
এদিকে পরের দিন অফিস এর পরের দিন আমার ফ্লাইট। বাসার সবাই যেতে বারণ করছে। এমনকি আব্বা যিনি রুগী তিনিও না করছেন। কিন্তু আমি বার বার আশ্বস্ত করছি আরো একটা দিন রেস্ট নিলে আমি ভালো হয়ে যাবো।
এ করে রবিবার দিনটা পার করলাম একটু একটু করে হাঁটা চলা শুরু করলাম। ভালো লাগছিলো।
পরের দিন সকালে বিমানবন্দরে যাই যময়ের অনেক আগেই। বসে থাকার চাইতে চেয়ারে শুয়ে ছিলাম বেশি। বসে থাকা মানে কোমর ভাঁজ হয়ে যাওয়া। তাই শুয়ে থাকলেই অনেক আরাম লাগে। বসে থাকি যদি একটা হালকা চিন চিন ব্যাথা উপরে উঠে আবার নীচে নেমে যায়।
বলেন কি অনেক সাহস তো। চলে গেলেন। সাথে আর কেউ না? এর আগে গেছেন চেন্নাই?
জ্বী না, যাই নি। অচেনা শহরে আমি আগে যাইনি।
ও আচ্ছা, কত ঘণ্টার ফ্লাইট ? ডাইরেক্ট ছিলো?
মাত্র আড়াই ঘন্টার, হ্যাঁ ডাইরেক্ট ছিলো। সমস্যা নেই আমি তো অনেক দেশ ঘুরেছি, আমার কাছে বিদেশ ট্যুর কোন ব্যাপার না।
না, সেটা মিন করে বলিনি।
আমরা এয়ারপোর্টে নেমে চলে যাই আগেই ঠিক করা একটা হোটেলে। সুন্দর, এক দম হাসপাতালের কাছে হেঁটে গেলে তিন চার মিনিট এর পথ। একটা রুমে দুইটা খাট দেয়া ছিলো, আমরা ফ্রেশ হয়ে নিলাম, তবে আমার ব্যাথা কম বেশি ছিলো। শুধু বসতে গেলে বেশি সমস্যা হচ্ছিলো। এ যেমন টয়লেট এ বসা, খাতে বসা, ইত্যাদি।
ও আচ্ছা, দুপুরে খেলেন কোথায়? শুনেছি খাবার দাবার নাকি.....
আমরা আসলে প্লেনে যা খাবার দিয়েছে সেটা খেয়ে আর খাবার এর তাগিদ অনুভব করিনি।
আমি ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালে যাই, ফেরার সময় কিছু ফল নিয়ে আসি। এবং সেদিন বিকেলেই আব্বাকে ডাক্তার দেখবেন বলে রাজী ছিলেন, যদিও বাংলাদেশ থেকে যে এপয়নমেন্ট ছিলো সেটা ছিল পরের দিন। আমি চাচ্ছিলাম যদি দ্রুতই অপারেশনটা করানো যায়।
খুব ভালো ছিলো হোটেল। যে মানের রুম দিলো বাংলাদেশী টাকায় অনেক সস্তা মনে হলো। বিকেলে আব্বাকে নিয়ে গেলাম, ডাক্তার এর কাছে, বিশ্বাস করেন, স্যার রোগ অর্ধেক চেম্বারেই ভালো হয়ে গেলো।
এতো ভালো ব্যবহার চিন্তার বাইরে।
বলেন কি?
হুম। শুনেছি তামিলদের ব্যবহার নাকি বেশ ভালো।
ডাক্তার একটা দুইটা কি যেন টেস্ট দিলো, এখন মনে নেই, তখন রিপোর্ট দেখে তিনি অপারেশনে যাবেন। তবে সব মিলিয়ে ২দিনের বেশি না। আমরা সেই টেস্ট করলাম, হোটেলে ফিরে এলাম। ধরেন সন্ধ্যার আগেই আমাদের কাজ শেষ।
নামাজ পড়ে বের হলাম, চা নাস্তা কিছু পাই কিনা। যাবার আগে অন লাইনে অনেক ভিডিও ব্লগ দেখেছি, সেগুলো দেখে দেখে খাবার এর হোটেলে গেলাম। যেহেতু দুপুরে কিছু খাইনি তাই একটু খিদে ভাব ছিলো।
দাদা আসেন, বাংলাদেশী? ঢাকা ? বসেন
আমরা বসলাম।
আব্বা বললেন কি আছে?
মাছ, ভাত, সবজী, ডিম আছে।
আমি দাম শুনতে চাইলাম
একটা প্লেটে সব সাজিয়ে দিয়ে বললো এটা নিলে ৮০ রুপি, এর সাথে মাছ বা ডিমের তরকারি নিলে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা বাড়বে, তবে ভাত ডাল সবজী যত পারেন টাকা লাগবে না। কিন্তু প্রতি মাছের বা ডিমের জন্য বাড়তি টাকা দিতে হবে।
আমরা মাছের তরকারির অর্ডার করে বসে থাকলাম। খাবার এলো। খেতে শুরু করলাম। খেয়াল করছি অনেকেই আসছে খাচ্ছে। দেখে বাংলাদেশী মনে হচ্ছে।
খাবার খেয়ে আমরা একটু আশে পাশে ঘুরতে গেলাম। রাতের চেন্নাই আমাদের কাছে একদম অচেনা এবং নতুন। (চলবে,,,)
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও ব্যাংকার