ছিলেন পটুয়াখালী ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, এখন ছাত্রদলের
প্রচারেই প্রসার, লীগ থেকে দলে

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
৬ মে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শামীম চৌধুরী ও সদস্য সচিব জাকারিয়া আহম্মেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে রবিউল ইসলামকে সভাপতি, আসিবুল হককে সাধারণ সম্পাদক ও সাকিব আল-হাসান রাফিকে প্রচার সম্পাদক করে ১০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। তবে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এ কমিটির নেতাদের অতীত, যারা পূর্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন।
নিষিদ্ধ জঙ্গি ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে: বিতর্কের কেন্দ্রে সাকিব
সাকিব আল-হাসান রাফি, যিনি ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অনুমোদিত কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে প্রচার সম্পাদক ছিলেন, তিনি এবার ছাত্রদলের একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সভাপতি রবিউল ইসলাম ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন, যদিও তার কোনো পদ ছিলো না। সাধারণ সম্পাদক আসিবুল হকের ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়তার কোনও রেকর্ড নেই। এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাফসান আহম্মেদ রাকিব একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, একজন ছোটভাই ছাত্রলীগে যে পোস্টে ছিলো, ছাত্রদলেও সে পোস্টেই আছে—শুধু নামটা বদলেছে।
প্রতিবাদ ও পদত্যাগ
কমিটি ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলন শেষে নবঘোষিত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি রাইসুল ইসলাম রুপুসহ দুই নেতা পদত্যাগ করেন। পদবঞ্চিতরা অভিযোগ করেন, কমিটিতে নিষিদ্ধ জঙ্গি ছাত্রলীগের সাবেক কর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যা ছাত্রদলের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নেতাদের বক্তব্য
ছাত্রদলের সভাপতি রবিউল ইসলাম দাবি করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে স্বেচ্ছায় অংশ নেননি। তিনি বলেন, যে ছবি ভাইরাল হয়েছে, সেদিন ছাত্রলীগ আমাকে ডেকে প্রোগ্রাম করিয়েছে। একইভাবে, সাকিব আল-হাসান রাফি জানান, তিনি ও তার পরিবার সবসময় বিএনপির রাজনীতি করে এসেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতারা জোরপূর্বক তার নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলো, কিন্তু তিনি কখনো ছাত্রলীগের কার্যক্রমে অংশ নেননি।
জেলা ছাত্রদলের অবস্থান
জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শামীম চৌধুরী জানান, কমিটি গঠনের আগে নেতাদের পটভূমি যাচাই করা হয়েছে এবং তারা ছাত্রদলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত বলে জানা গেছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্থাপিত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আরও তদন্তের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে এমন রাজনৈতিক দলবদল ও কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলীয় আনুগত্য ও আদর্শের বিষয়ে। সোশ্যৗাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি পদবঞ্চিত নেতাদের প্রতিবাদ ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।
সবার দেশ/কেএম