আ.লীগ রুখতে একাট্টা বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি

জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এক প্রশ্ন এই মুহূর্তে কেন্দ্রবিন্দুতে—আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে কি না। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানান মতপার্থক্য আছে, সে সকল সীমান্ত লঙ্ঘন করেই বিএনপি, জামায়াত ও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এক স্বর দিয়েছেন — আওয়ামী লীগের পূর্ণবসানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।

অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘে পাকিস্তানের জিও টিভি র সাক্ষাতকারে বলেছেন- আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেয়া হতে এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে। তার এ বক্তব্যের পর দলগুলোর মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। 

তবে প্রধান উপদেষ্টার আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা যে কোন সময় তুলে নেয়া হবে। দল গুলোর মাঝে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার পরে সরকারের পক্ষ আইন উপদেষ্টা বলেছেন - নির্বাচনের আগে তো নয়, অদূর ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠবে না।

তবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা বলছেন, ’২৪-এর গণহত্যার নেতৃত্ব দেয়া এবং বিগত সাড়ে ১৫ বছর দেশে স্বৈরশাসন চালানো আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের ছাড় দেয়ার কোনও  সুযোগ নেই। নিজেদের মধ্যে অনৈক্য থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে একাট্টা।  আওয়ামী ফ্যাসিস্টকে রাজনীতিতে পূর্নবাসন এর সুযোগ নেই।

সব রাজনৈতিক দল  আওয়ামী লীগ প্রশ্নে একাট্টা  দেশের এ পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেউ পতিত কোনো শক্তিকে সহায়তা করবেন না সমর্থন দেবেন না। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। অনেক রক্তের বিনিময়ে, অনেক সংগ্রামের বিনিময়ে আমরা আজকের এ পরিস্থিতিতে এসেছি। কেউ  দেওয়ার চেষ্টা করলে তা সম্মিলিত ভাবে রুখে দেবে বলে দলগুলোর সূত্র থেকে জানা গেছে।

এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে কেন আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে যে কোন সময়, এটা মেনে নিতে পারছে না বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সাধারণ নেতাকর্মীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, কেন এ সময়ে এসে, প্রধান উপদেষ্টার এমন সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে দিলেন বোধগোম্য হচ্ছে না। নাকি ইচ্ছা কৃত ভাবেই করেছেন; দেশাবাসী ও রাজনৈতিক দল গুলোর কি প্রতিক্রিয়া হয় বোঝার জন্য? আমি আসলে মাঝে মধ্যে ড.ইউনূসকে বুঝতে পারি না।  

রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষ্যমতে, প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে এবং আতঙ্কিত করেছে। যে দল নির্বিচাারে মানুষ হত্যা করেছে, তাকে পূর্নবাসন করা মানে রাজনৈতিক মৃত্যু নিশ্চিত করা বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলের নেতা। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে নিয়ে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে; তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার ও ক্ষমা চাওয়া ছাড়া দলটির বিষয়ে কারও ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার আছে বলে মনে করে না দলগুলোর নেতারা। 

এদিকে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য দলগুলোর মাঝে থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে এক। তাদের ভাষায়, নির্বাচনের আগে  এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধও হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলে ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, তা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এমনকি নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে মনে করে নেতারা।

তবে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বতী সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে চায়, আওয়ামী লীগকে পূর্নবাসন করবে না। তার কারণ হল- আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেছেন অদূর ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা উঠবে না।

সরকারের অন্যতম মুখপাত্র প্রেস সচিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার এভাবে বলেনি কথাটা। অবশ্য সাক্ষাৎকারে ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেওয়া হতে পারে’ এমন কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেননি বলে জানিয়েছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) পরিচালিত ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান বাংলাফ্যাক্ট।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন বক্তব্যে এরইমধ্যে বলেছেন, 

আওয়ামী  ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে  দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সকলেই একাট্টা।পতিত স্বৈরাচার বাংলাদেশে আর ফিরে আসতে পারবে না। দেশের মানুষ তাদেরকে কখনও  আসতে দেবে না। 

তিনি আরও বলেন, তবে একটি মহল পরিকল্পতভাবে রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। পলাতক ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসার পথ তৈরি হতেই পারে। বিএনপির তো হারানোর কিছু নেই। যারা ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছে, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলছেন বিএনপির একাধিক নেতা।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রশ্নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল  অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, 

দেশের মানুষ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে রক্তের বিনিময়ে। তাদেরকে পূর্নবাসন করা জন্য নয়। এবং কখনো মেনে নেবে না। আমরা সকলেই আওয়ামী লীগের প্রশ্নে একমত।  তাদের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই। 

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতে নতুন নতুন তত্ত্ব সামনে আনা হচ্ছে। তা ষড়যন্ত্র বলে মনে করি। 

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সফলতা ধরে রাখতে হলে ফ্যাসিবাদীদের বিচার ও সংস্কার দ্রুত করার বিকল্প নেই। ইতিবাচক ধারায় দেশের রাজনীতিকে নিয়ে যেতে এবং স্বৈরাচারের পুনর্বাসন ঠেকাতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা ঘাপটি মেরে আছে। দিল্লির আধিপত্যবাদের কালো থাবা সব দিক থেকে চেপে বসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি, কূটনীতির ওপর এর ছায়া বিস্তৃত হয়েছে। এমনকি আসন্ন নির্বাচন নিয়েও জনগণের আকাক্সক্ষা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চাই, তা হবে সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে চাই। তিনি বলেন, সংস্কার ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

কোনও দল বিতর্ক করলেই তার মানে এ নয় যে, তারা নির্বাচন চায় না কিংবা নির্বাচন পেছাতে চায়। আলোচনার সময় মতপার্থক্য হতেই পারে, নতুন যুক্তি আসতেই পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম  বলেন, 

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সহযোগী যত দোসর রয়েছে এবং যারা দলটিকে আবার পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, তাদের সবাইকে দেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করা হবে। দেশের আদালতে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এর বিকল্প নেই।

নাহিদ আরও বলেন, আমরা আশা করবো, দেশ যাতে অস্থিতিশীলতার জায়গায় না যায়। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো। বাংলাদেশে সংস্কারও হবে, নির্বাচনও হবে, নতুন সংবিধানও হবে। এটা জনগণের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। দেশে একধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার ফ্যাসিবাদী পক্ষকে আমরা কোনোভাবেই জায়গা করে দেবো না। সুযোগ করে দেবো না।

সবার দেশ/কেএম