পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমলো ২০–৩০ টাকা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হুঁশিয়ারি ও ভারত থেকে আমদানির গুজব ছড়ানোর পর বাজারে হঠাৎ কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম রোববার রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেছে ২০–৩০ টাকা।

গত কয়েকদিন আগে পর্যন্ত কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর, নয়াবাজার, হাতিরপুল ও পলাশী মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে—এমন খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়তেই দাম পড়ে গেছে। আড়ত থেকেই কমে কিনেছি, তাই ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বিক্রি করছি। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে আরও কমবে।

সরকারের সতর্কবার্তা: ‘আরও না কমলে আমদানি অনুমোদন’

রোববার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না নামলে আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে।

তিনি জানান, দেশে এখনো যথেষ্ট পেঁয়াজের মজুত রয়েছে এবং নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে দুই সপ্তাহের মধ্যে। দেশে কোনও সংকট নেই—বাম্পার ফলন হয়েছে। তবুও যদি বাজারে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো হয়, সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে, বলেন তিনি।

শেখ বশিরউদ্দীন জানান, পেঁয়াজ আমদানির জন্য ইতিমধ্যে ২ হাজার ৮০০টি আবেদন জমা পড়েছে। এ আবেদনের মাত্র ১০ শতাংশ অনুমোদন দিলেই বাজারে পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে যাবে এবং কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন, যোগ করেন তিনি।

সিন্ডিকেট ও কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ

বাণিজ্য উপদেষ্টা যদিও বলেন, আমার কাছে সিন্ডিকেটের প্রমাণ নেই, সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে—তবুও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অসাধু মজুতদার ও ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটেরই কাজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, এ মুহূর্তে দেশে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ কৃষকের হাতে আছে। বাজারেও সরবরাহ স্বাভাবিক। কিন্তু অসাধু চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ট্যারিফ কমিশন সম্ভবত কিছু আমদানিকারকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমদানির সুপারিশ করেছে। দেশে সংকট না থাকা সত্ত্বেও তারা ইমপোর্ট পারমিটের জন্য চাপ তৈরি করছে।

ক্যাবের সতর্কতা: ‘আমদানিতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে’

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন, দেশে উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারের কারসাজি বন্ধ না করে এখন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে কৃষক মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যারা আমদানির সুবিধা নিতে চায়, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সারসংক্ষেপ

• গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিলো কেজিপ্রতি ১৩০ টাকায়
• সরকারের হুঁশিয়ারি ও আমদানির খবর ছড়াতেই কমেছে ২০–৩০ টাকা
• বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পর্যাপ্ত মজুত আছে
• ২,৮০০টি আমদানির আবেদন জমা পড়েছে, তবে কৃষক ক্ষতির আশঙ্কায় সরকার সতর্ক
• বাজার পর্যবেক্ষণে প্রশাসনিক নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে

সবার দেশ/কেএম