উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাণিজ্যপথ ও সীমান্ত অঞ্চল
মিয়ানমারে তীব্র সংঘাত: বিদ্রোহীদের গুলিতে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষ নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে। শুধু স্থলপথেই নয়, আকাশপথেও সামরিক জান্তার শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বিদ্রোহীরা। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাগাইং অঞ্চলে একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বিদ্রোহী সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA)। এ ঘটনা জান্তা সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গতকাল (১০ জুন) পালেতে কান ডাক পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বিস্ফোরণের সময় PLA যুদ্ধবিমানটি গুলি করে। গুলিবিদ্ধ বিমানটি কিছু দূরে একটি বৌদ্ধ মঠে বিধ্বস্ত হয়, মঠটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে পাইলটের হেলমেট ও খুলি পাওয়া গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, এ ঘটনা জান্তা বাহিনীর ‘আকাশ দখলের ক্ষমতা’কে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এদিকে, উত্তরের শান রাজ্যে কৌশলগত শহর নওংকিও ঘিরে আবারও দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। শহরটি বর্তমানে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ট্যাংগ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (TNLA)-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ম্যান্ডালে-লাশিও-মুসে বাণিজ্যপথে অবস্থিত হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণ কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জান্তা বাহিনী শহরটি পুনর্দখলের জন্য ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। টানা সংঘর্ষের ফলে আশপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে পালিয়ে গেছে।
চীনের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের সংঘর্ষ চীনকেও উদ্বিগ্ন করছে। কুনমিংয়ে জান্তা সরকার ও TNLA-এর মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করে বেইজিং সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও আগস্টের সম্ভাব্য দ্বিতীয় বৈঠকের আগেই সংঘর্ষ তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের এ সংঘাত শুধু অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে জান্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সীমান্ত অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ এই সংঘাতকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলছে।
অন্যদিকে জান্তা সরকার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তারা দাবি করছে, মোট ২৬৭টি টাউনশিপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে। তবে ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ (NUG) জানিয়েছে, ১৪৪টি টাউনশিপ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে এবং অন্তত ৭৯টি এলাকায় সরাসরি লড়াই চলছে—ফলে এ নির্বাচন আদতে একপেশে ও অবৈধ বলে তারা মনে করছে।
আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান-এর বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়া এক বিবৃতিতে মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ এবং নির্বাচন স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। যদিও জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন, তাদের নির্বাচনী পরিকল্পনায় চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার মতো ঘটনা জান্তার বাহিনীর মনোবলে বড় আঘাত হানতে পারে এবং এটি বিদ্রোহীদের মনোবল আরও বাড়িয়ে তুলবে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, মিয়ানমার এখন এক গভীর গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যেখানে রাজনীতি, অস্ত্র ও কূটনীতি—all in play.
তথ্যসূত্র: ইরাবতী
সবার দেশ/কেএম




























