লিবিয়ায় মাফিয়ার বন্দিদশা থেকে মুক্তি, দেশে ফিরছেন দুই বাংলাদেশি
লিবিয়ায় ভয়ঙ্কর মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি হয়ে নয় মাস ধরে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া দুই তরুণ বাংলাদেশি— ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর ও কুষ্টিয়ার তানজির শেখ— অবশেষে মুক্তি পেয়ে ফিরছেন নিজের মাতৃভূমিতে।
বুধবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টায় বুরাক এয়ারলাইন্সের (ফ্লাইট নম্বর: UZ222) একটি ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালে স্থানীয় দালালদের লোভনীয় প্রলোভনে পড়ে তাদের পরিবার থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া পাড়ি জমান সাগর ও তানজির। দালালরা বলেছিল— ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি মিলবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিলো ভয়াবহ। সেখানে পৌঁছেই তারা পড়ে যান মানবপাচারকারীদের ফাঁদে। পরে আরও ভয়াবহ প্রতারণার মাধ্যমে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয় এক মাফিয়া চক্রের হাতে।
তাদের সঙ্গে আরও প্রায় ৮০ জন বাংলাদেশিকে বন্দি করে রাখা হয় একটি অন্ধকার কক্ষে। শুরু হয় পৈশাচিক নির্যাতন— লোহার রড, লাঠি এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দিনের পর দিন চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলে নির্যাতকেরা ভেবে নেয়, তারা আর বাঁচবে না— তাই ফেলে চলে যায়। ভাগ্যক্রমে, তারা উদ্ধার পান ত্রিপোলির এক আত্মীয়ের আশ্রয়ে।
এরপর পরিবার ব্র্যাকের কাছে সহায়তার আবেদন জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিইপি) অফিস, ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন (আইজেএম) ও আইওএম-এর যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় উদ্ধারপ্রক্রিয়া। আইওএম লিবিয়া চ্যাপ্টার তাদের উদ্ধার করে একটি সেইফ হোমে নেয়। সেখান থেকে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া ও কূটনৈতিক তৎপরতার পর শেষ পর্যন্ত ফিরছেন সাগর ও তানজির।
এ ফিরে আসা শুধু দুটি মানুষের জীবনরক্ষা নয়— বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, মানবিক সহানুভূতি ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা কীভাবে চরম বিপর্যয় থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারে, তার জীবন্ত উদাহরণ।
তাদের এ প্রত্যাবর্তন দেশের মানবাধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে এক স্পষ্ট বার্তা— প্রবাসে বিপদে পড়া প্রতিটি নাগরিকের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব কেবল পরিবারের নয়, রাষ্ট্র ও বিশ্বসম্প্রদায়েরও।
সবার দেশ/কেএম




























