ইউরোপে দাবদাহে ২৩০০ জনের মৃত্যু, দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন
গত সপ্তাহে ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়া তীব্র দাবদাহে আনুমানিক ২ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি ২ জুলাই শেষ হওয়া ১০ দিনের তাপপ্রবাহ নিয়ে পরিচালিত হয়, যেখানে পশ্চিম ইউরোপের বিশাল অংশ ভয়াবহ গরমে আক্রান্ত হয়।
বিশেষ করে স্পেনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, পাশাপাশি শুরু হয় দাবানল। গবেষকদের মতে, এ সময়ের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র গরমের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষক ড. বেন ক্লার্ক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপে এখনকার দাবদাহ আগের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
গবেষণায় বার্সেলোনা, মাদ্রিদ, লন্ডন, মিলানসহ ১২টি শহর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয়। অতীতের পরিসংখ্যান ও মহামারি সংশ্লিষ্ট মডেল ব্যবহার করে এই মৃত্যু সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে। যেখানে তাপমাত্রা ছিল সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তথ্য অনেক দেশ এখনো প্রকাশ করেনি, আবার অনেক মৃত্যু আনুষ্ঠানিকভাবে দাবদাহজনিত হিসেবেও রেকর্ড হয়নি। তাই দ্রুত প্রাথমিক বিশ্লেষণের জন্য তারা পিয়ার রিভিউ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের মাসিক বুলেটিন অনুসারে, ২০২৫ সালের জুন ছিল বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ জুন মাস। বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে এবারের উষ্ণতা, যেখানে তাপমাত্রা অনেক এলাকায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে।
কোপারনিকাসের স্ট্র্যাটেজিক লিড সামানথা বুরগেস বলেন, পৃথিবী যত দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে, দাবদাহ তত ঘন ঘন এবং বিপজ্জনকভাবে ফিরে আসছে। এর সরাসরি প্রভাব ইউরোপজুড়ে লক্ষ করা যাচ্ছে।
এর আগে, ইউরোপের স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২২ সালে অন্তত ৬১ হাজার মানুষ দাবদাহজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। নতুন গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, দাবদাহ মোকাবেলায় ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রস্তুতি এখনও মারাত্মকভাবে অপর্যাপ্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোসহ নানা কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব উষ্ণায়নের গতি বাড়ছে। এর ফলে, গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হলে তা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করছে।
সূত্র: রয়টার্স
সবার দেশ/এফএস




























