মানামা সংলাপে তুলসী গ্যাবার্ডের কঠোর বার্তা
বিদেশি সরকার পাল্টানোর মার্কিন যুগের অবসান
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সরকার পরিবর্তন’ ও ‘জাতি গঠন’ নীতির যুগ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বাহরাইনের রাজধানী মানামায় অনুষ্ঠিত ‘মানামা সংলাপে’ মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তুলসী বলেন,
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও জাতি গঠনের এক অন্তহীন ও বিপর্যয়কর চক্রে আটকে ছিলো। আমরা একের পর এক সরকার পতনের পেছনে লিপ্ত হয়েছি, আমাদের শাসনব্যবস্থা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছি, এমন সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছি যা আমরা নিজেরাই খুব কম বুঝতাম।
তিনি আরও যোগ করেন,
ফলাফল ছিলো বিপর্যয়কর— কোটি কোটি ডলার ব্যয়, অগণিত প্রাণহানি, আর তার বিনিময়ে নিরাপত্তার পরিবর্তে আরও শত্রু তৈরি হয়েছে। মিত্রতার বদলে বেড়েছে অবিশ্বাস।
তুলসীর এ মন্তব্য মূলত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের প্রতিফলন। ট্রাম্প নিজেও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সংলাপে তুলসী জানান,
আমরা আজ যে অবস্থায় আছি, তা আমাদের শেখায়— জাতি গঠন বা অন্য দেশের সরকার পতনের নামে যুদ্ধ শুধু অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে।
যদিও তিনি দক্ষিণ আমেরিকায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, ভেনেজুয়েলায় সিআইএ–এর গোপন অভিযান কিংবা মাদকবিরোধী অভিযানের নামে সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এসব ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ নিয়ে এখনো জল্পনা থামেনি।
অন্যদিকে, ট্রাম্প সম্প্রতি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন নেতা আহমেদ আল-শারাকেকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন— যিনি একসময় ইরাকের একটি মার্কিন কারাগারে বন্দী ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, তুলসীর বক্তব্য ট্রাম্পের সে অবস্থানকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘বিশ্বের পুলিশ’ নয়, বরং ‘নিজ দেশের নিরাপত্তা রক্ষাই’ তার প্রধান লক্ষ্য।
এ সংলাপে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের এ ঘোষণা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন বৈদেশিক হস্তক্ষেপ নীতির ‘সমাপ্তির ঘোষণা’, আবার কেউ এটিকে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাচনী কৌশল হিসেবেও দেখছেন।
সবার দেশ/কেএম




























