উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আরও ১২ জন
ঢাবির সাবেক ভিসি আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাশেদের মামলা

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে সংঘটিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় সাত বছর পর দায়ের করা হয়েছে বহুল আলোচিত একটি মামলা। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎকালীন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। মামলাটি দায়ের করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
রোববার (৪ মে) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ থানায় তিনি মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর।
অভিযুক্তদের তালিকায় কারা রয়েছেন?
মামলায় অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন:
- অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান (তৎকালীন উপাচার্য)
- অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী (তৎকালীন প্রক্টর)
- জাহাঙ্গীর কবির নানক (আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য)
- এনামুল হক শামীম (সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ)
- সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসেন (সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ)
- আবিদ আল হাসান ও মোতাহার হোসেন প্রিন্স (সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ)
- আল নাহিয়ান খান জয় ও শাকিব হাসান সুইম (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি ও সহ-সভাপতি)
- মেহেদী হাসান (মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি)
- ড. মাকসুদ কামাল (তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, পরবর্তী উপাচার্য)
- অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (ডিইউ ভিসি অফিসের তৎকালীন উপ-উপাচার্য)
এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মীকে বিবাদী করা হয়েছে।
রাশেদের অভিযোগ কী?
রাশেদ খান বলেন, ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল রাত ১টার দিকে ‘ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ’ লেখা গেঞ্জি পরিহিত একদল যুবক ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ঢুকে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। অথচ সে ঘটনায় আমাকেই আসামি করে মামলা হয়। আমাকে গ্রেফতার করে দুই মামলায় ১৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি বলেন, আমি তখন শেখ হাসিনাকে কটূক্তির অভিযোগে ও বাসভবনে হামলার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হই, কিন্তু প্রকৃত হামলাকারীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে যায়।
কেন এখন মামলা?
রাশেদ খান জানান, আওয়ামী লীগ আমলে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, এখন এ মামলা করেছি, যাতে স্পষ্ট হয় কারা প্রকৃত অপরাধী ছিলো। এ মামলাটিই দেখাবে—উপাচার্যের বাড়িতে কে আগুন দিয়েছিল।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আল নাহিয়ান খান জয় রাজনৈতিকভাবে আমাকে দমন করতে মিথ্যা মামলা দেয়। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও এনামুল হক শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও ওই রাতে ক্যাম্পাসে এসে ষড়যন্ত্রে জড়ান।
তদন্ত ও বিচার দাবি
রাশেদ খান দাবি করেন, ডাকসু নির্বাচনে তারা ১১টি পদে জয়লাভ করলেও ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত দাবি করেছি, তারা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য নিরপেক্ষ বিচারিক তদন্ত প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের মতে, এইমামলার মাধ্যমে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকালীন সময়ের বহু বিতর্কিত ঘটনার পুনর্মূল্যায়নের দরজা খুলে গেল।
সবার দেশ/কেএম