গণহত্যার অভিযোগে হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান
হাসিনার সরাসরি নির্দেশে আলেমদের হত্যা করা হয়

হেফাজতের ওপর নৃশংসতার এক যুগ আজ। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে—এ দুই দিন দেশের আলেম সমাজের জন্য ভয়াল এক অধ্যায়। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করে যেভাবে অভিযান চালানো হয়েছিলো, তা এখনো বহু মানুষের মনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে।
অরাজনৈতিক দাবি নিয়ে আয়োজিত হেফাজতের সমাবেশটি রুদ্ধ করতে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি মাঠে নামে। দিনের বেলায় লাঠিচার্জ, গুলি, টিয়ারশেলের পর রাত ঘনিয়ে এলে অভিযান রূপ নেয় আরও কঠোর দমননীতিতে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতভর গুলি চালায়। বহু আলেম-উলামা আহত হন, অনেকে নিহত হন, যা তখনকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অধিকার ৬১ জন নিহতের তালিকা প্রকাশ করলেও, পরে ওই সংস্থার সম্পাদক আদিলুর রহমান শুভ্রকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয়। তাকে কারাবরণ করতে হয়, আর অধিকারকে নিষিদ্ধ কার্যক্রমের আওতায় ফেলে সরকার।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ৫ মে রাতের ওই অভিযানের পরিকল্পনা ও সরাসরি নির্দেশনা এসেছিলো সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খুনি হাসিনার পক্ষ থেকে। ওই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের ডিজি এবং গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বেও দায়ের অভিযোগ আনা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীর্ঘ পর্যালোচনার পর ট্রাইব্যুনাল এ ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা (এএসপি) এফএম ইফতেখারুল আলম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত বড়। নিহতদের শনাক্তকরণ, রেকর্ড সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেয়ার মতো নানা বিষয় চলমান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী মাফিয়ারানি হাসিনার সরাসরি নির্দেশনা ছাড়া এমন অভিযান সম্ভব ছিলো না।
ট্রাইব্যুনালের রেকর্ড অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৯ জনকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে—তারা হলেন: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী পলাতক হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
এর বাইরে চারজন আগে থেকেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে আছেন—তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান এবং সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম। আগামী ১২ মে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানিয়েছেন, আমরা গণহত্যার ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছি। তদন্তে আরও কেউ জড়িত থাকলে, আমরা চাই তারা যেন বিচারের আওতায় আসে।
২০১০ সালে নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা থেকে শুরু হয়েছিলো হেফাজতের পথচলা। পরে ২০১৩ সালের ৫ মে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা ও ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে, যাতে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রকাশ্যে সমর্থন জানায়। সে সময়েই শুরু হয় সরকার ও হেফাজতের মুখোমুখি অবস্থান, যার পরিণতি ছিলো ৫ মে’র ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়াবহ অভিযান।
সবার দেশ/কেএম