যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে স্বস্তি, শর্তের চাপ
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক অবশেষে ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে নামিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। শুল্ক কমানোর এই সিদ্ধান্তে দেশের রপ্তানি খাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও শর্তাবলির চাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত আদেশ অনুযায়ী, শুল্ক হ্রাসের সাত দিন পর থেকে সংশোধিত হার কার্যকর হবে। তবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এখনও ১৫ শতাংশ গড় শুল্ক বহাল থাকায় মোট শুল্কহার দাঁড়াচ্ছে ৩৫ শতাংশ। একই তালিকায় পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, আর মায়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে পাল্টা সুবিধা না দেওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘ন্যায্য বাণিজ্য নীতি’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানা তিন দিনের আলোচনার পর শুল্ক হ্রাসে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, নতুন শুল্কহার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে সহায়ক। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানও এটিকে রপ্তানি খাতের জন্য স্বস্তির খবর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাপক প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক সরঞ্জামে অগ্রাধিকার, বোয়িং উড়োজাহাজ, এলএনজি, গম, সয়াবিনসহ একাধিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি আমদানি চুক্তি এবং চীনা প্রযুক্তি ও সামরিক পণ্য থেকে সরে আসা। চুক্তির আওতায় মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা দেশটির বাণিজ্যিক নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা সংকুচিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এই চুক্তি স্বল্পমেয়াদে স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের নীতিমালা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, শুল্ক কমলেও এর বিনিময়ে সংবেদনশীল কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যা জনসমক্ষে আসেনি। সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কয়েক বছর লাগবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান শুল্কহার প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রায় সমান, যা সাময়িক স্বস্তি দিলেও রপ্তানিতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এখনই দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রস্তুতি নিতে হবে।
সবার দেশ/এফএস




























