বালু খেকোদের দৌরাত্ম
সাংবাদিক ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাত জনের নামে মিথ্যা মামলা
গাইবান্ধা সদর উপজেলাধীন ১২ নং কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ও দৈনিক গণমুক্তির সংবাদাতা এম সাদ্দাম হোসেন (পবন)সহ অত্র ইউনিয়নের মোট ৭ জনের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমুলক একই তারিখ একই সময়ের ঘটনায় মামলা দায়ের করে সদর থানায়।
জানা গেছে, দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার গাইবান্ধা প্রতিনিধি এম সাদ্দাম হোসেন পবন ও কামারজানী ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও জামায়াতে ইসলামী-ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাত জনের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী চক্রের নেতা মিলন মিয়া। যাকে এলাকার বালুখেকো নামে পরিচিত।
দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকায় বিশেষ প্রতিবেদনে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে এ মিথ্যা ও চাঁদাবাজির মামলায় প্রতিবেদক সহ ৭জন কে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
গত ২১ মে বুধবার গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলাটি রুজু হয়। সুন্দরগঞ্জ থানার মামলা নাম্বার ৩৫/১৭৩,২০২৫ এমন মিথ্যা মামলার ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ও এলাকার জনগন প্রতিবাদে মুখর ও ফুসে ওঠার বাস্তব চিত্র সবার দেশ পত্রিকার প্রতিবেদকের চোখ এড়িয়ে যায়নি।
জানা গেছে অত্র এলাকার প্রতিবাদী চেয়ারম্যানকেও আসামি থেকে বাদ দেয়নি বালুখেকো মিলন।
মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় আসামিরা হলেন কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান, ইউপি সদস্য মোঃ ছদরুল কবির আঙ্গুর, ইসলামী আন্দোলনের নেতা মোঃ মাজু আহমেদ, সচেতন ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম আউয়াল, মোঃ মমিন মিয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন।
মামলার এজাহার সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন মিয়ার কাছে এজাহার নামীয় আসামীরা তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ঘটনার ৫ মাস পর থানায় মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে মামলা করেন।
স্থানীয় জনমানুষের কাছে তথ্য নিয়ে জানা গেছে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা কখনোই চাঁদাবাজি করার লোক নন। এটা একটি হয়রানি ও প্রতিহিংসা মূলক মামলা। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় কোন প্রমান না থাকায় আসামিদের ইতোমধ্যে আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে।
দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার অনুসন্ধানের তথ্য ও এলাকাবাসী বলছে, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন মিয়া ও রানা মিয়া গাইবান্ধা সদরের কামারজানী ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় ঘটনার ওই দিন ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে সকাল সাড়ে দশটার সময় ব্লাকহেড দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করার কালে আনুমানিক পাঁচ-ছয় হাজার সাধারন ছাত্র-জনতা গিয়ে অবৈধ বালু ভর্তি ব্লাকহেট আটক করে। পরে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীর হামলায় ছাত্র-জনতার মধ্যে মারাত্নকভাবে ৮ জন আহত হয়। পরে জেলার আইন প্রয়োগকারি সংস্থা সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে আটককৃত অবৈধ বালু ভর্তি ব্লাকহেড দুটি কামারজানী ইউনিয়ন পরিষদের জিম্মায় রাখা হয়
সাম্প্রতিক সময়ে গাইবান্ধা সদরের কামারজানী ইউনিয়নের গোঘাট গ্রাম বেষ্টিত ব্রম্মপুত্র নদ থেকে ব্লাকহেড দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে কঠোরভাবে হস্থক্ষেপ করায় কামারজানী ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রাম পুলিশদের উপর অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন মিয়া ও রানা মিয়া সশস্ত্র হামলা চালায়। এ ঘটনায় কামারজানী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশদের দফাদার মোঃ টুকু মিয়া বাদি হয়ে মামলা করেছেন। এতো সব ঘটনার পরেও প্রশাসন কেন অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন মিয়া ও রানা মিয়াকে গ্রেফতার না করে বরং তার দায়েরকৃত মামলা থানায় গ্রহণ করলো সেটি এখন জনমনে প্রশ্ন? তার দৌরাত্ম ও প্রশাসনের নাগের ডগায় দাপিয়ে বেড়ানো বালুখেকো মিলন ও তার সহযোগিরা তাদের আধিপত্য বিস্তারের ফলে প্রতিনিয়ত একের পর এক সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
অবৈধ বালু ব্যবসায়ী চক্রের হোতা মিলন মিয়া ও রানা মিয়া দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে ব্যবসা করার কারনে নদী ভাঙনের তীব্রতা ধারনসহ বালুবাহী গাড়ী চলাচলে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো সাধারণ মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ এবং বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখলে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফুসে ওঠেন অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা।
কামারজানী বালু মহাল প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মোঃ ইকবাল হোসেন বাদি হয়ে সদর থানায় ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখের ঐ ঘটনায় ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন যার মামলা নাম্বার ২/২০২৫ এবং একই ঘটনায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে কামারজানী ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোছাঃ শাকিলা জাহান বাদি হয়ে গাইবান্ধা সদর থানায় অবৈধ বালু ভর্তি ব্লাকহেড জব্দসহ অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন মিয়া ও রানা মিয়াসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যার মামলা নাম্বার ২১/২০২৫।
একই তারিখ, একই সময় এবং একই ঘটনাস্থল সদরের কামারজানী ইউনিয়নের গোঘাট ব্রম্মপুত্র নদের তীরবর্তী হলেও ঘটনার ৫ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর মিলন মিয়া নামের কুখ্যাত অবৈধ বালু ব্যবসায়ী বাদি হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দেয়ায় এ নিয়ে এলাকার ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন মিয়া ও তার চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং প্রকাশ্যে প্রাননাশের হুমকি প্রদর্শন করেই চলছেন। এমন ঘটনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কামারজানী বালু মহাল প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মোঃ ইকবাল হোসেন সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানা গেছে।
অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিলন চক্রের মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার বিষয়ে দৈনিক গনমুক্তি পত্রিকার গাইবান্ধা প্রতিনিধি এম সাদ্দাম হোসেন পবন বলেন, কামারজানী একটি নদীবেষ্টিত ঐতিহ্যবাহী বন্দর ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্রতিনিয়ত এখানে মিলন মিয়া ও রানা মিয়াসহ একটি চক্র নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে নদী ভাঙন বৃদ্ধিসহ বালুবাহী পরিবহনের কারনে রাস্তা সাধারণ মানুষের জন্য চলাচল অনুপযোগী এবং পরিবেশগত সমস্যার কারনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করায় সেই সব প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ করার ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় তাকে সহ সাত জন নিরপরাধ সামাজিক ভাবে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিকে এ মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলনের নেতা মোঃ মাজু আহমেদ বলেন, গত ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫ তারিখে সকাল সাড়ে দশটায় কামারজানী এলাকার গোঘাট গ্রাম বেষ্টিত নদী থেকে ব্লাকহেড দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার ঘটনায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ব্লাকহেড দুটি আটক করতে গেলে সাধারণ মানুষের উপর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা হামলা করে অথচ আমাদের সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ঘটনার ৫ মাস পর চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা সুন্দরগঞ্জ থানায় করেছে যা আমরা নিতান্তই প্রতিহিংসার স্বীকার।
কামারজানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, সাংবাদিকসহ আমাদের সাত জনের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে যা ষড়যন্ত্র ও হয়রানির উদ্দেশ্যে। এ ধরনের মামলা অত্যন্ত নিন্দাজনক এবং ব্যক্তি আক্রোশপ্রসূত।
মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার বিষয়ে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে ভুয়া অভিযোগের মামলায় এখন চেয়ারম্যান সহ ৭ জন জামিনে মুক্ত আছেন। এদিকে সুন্দরগঞ্জ থানার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন এ ধরনের মামলা গ্রহনের আগে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে সচেতন থাকবে তার প্রশাসন।
অন্য সুত্রে জানা গেছে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদরে করা অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রশাসনিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার অপেক্ষায় কামারজানীবাসির। যাতে এ মামলার রেশধরে কোনভাবে আর কোন হয়রানি না করা হয়, সেদিকে প্রশাসনের লক্ষ্য রাখার দাবী জানান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সচেতন মহল।
সবার দেশ/কেএম




























