সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি এখন কিন্ডারগার্টেন

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন ‘আইভি ভবন’ এখন শিশুদের হাসি-খেলায় মুখর। প্রায় এক বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এ বাড়িতিতেই চালু হয়েছে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে জিল্লুর রহমানের একমাত্র ছেলে ও সাবেক এমপি নাজমুল হাসান পাপনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। অনেকের ধারণা, তিনি সপরিবারে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এরপর থেকেই ভৈরবের এ পারিবারিক বাড়িটি ছিলো সম্পূর্ণ নির্জন ও পরিত্যক্ত। সবসময় তালাবদ্ধ থাকত বাড়ির প্রধান গেট, ধুলো জমে থাকত বারান্দা ও উঠানে। স্থানীয়রা বাইরে থেকে কেবল ‘রাষ্ট্রপতির বাড়ি’ বলে পরিচিত এ ভবনটি দেখতে যেতেন।

সম্প্রতি হঠাৎ এলাকাবাসীর নজরে আসে, ওই বাড়িটিতে খুলেছে ‘সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন’। অনুসন্ধানে জানা যায়, জিল্লুর রহমানের চাচাতো ভাই মরহুম তারা মিয়ার ছেলে নঈম আহমেদ এ স্কুলের অংশীদার। মূল উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভৈরবের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত। তার সহায়তায় বাড়িটি ভাড়া নিয়ে স্কুল হিসেবে চালু করা হয়।

অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত বলেন, আমার স্কুলটি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করি। তখন তারা মিয়া আমার পার্টনার ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নঈম এখন আমার সঙ্গে পার্টনার হিসেবে আছেন। নঈম জিল্লুর রহমানের ওয়ারিশদের সঙ্গে কথা বলে ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

তিনি আরও জানান, ৫ আগস্টের ঘটনার পর বাসাটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। আমি নিজের খরচে সংস্কার করেছি, সে খরচ ভাড়া থেকে কর্তন করে নেবো—এভাবেই চুক্তি হয়েছে। নিচতলাটি স্কুল হিসেবে ব্যবহার করছি, দোতলাটি এখনো খালি রাখা হয়েছে। আমি মনে করি, শিশুদের পদচারণায় এ বাড়িটি আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে জিল্লুর রহমান মূলত ঢাকার গুলশানের নিজ বাসায় থাকতেন। ভৈরবের বাড়িটি তখন কেয়ারটেকারের তত্ত্বাবধানে ছিলো। প্রয়াত স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানের স্মৃতিতে বাড়িটির নাম রাখা হয় ‘আইভি ভবন’।

বর্তমানে সে ঐতিহাসিক বাড়িতেই চলছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। তবে স্কুলের অংশীদার নঈম আহমেদ বা জিল্লুর রহমানের পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতির দুই মেয়েও বহুদিন ধরে এ এলাকায় আসেন না।

একসময় ভৈরবের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতীক ছিল ‘আইভি ভবন’; আজ সেটিই হয়ে উঠেছে শিশুশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। সময়ের পালাবদলে যেন এক নীরব রূপান্তর ঘটেছে এ বাড়ির অতীত ও বর্তমানের মাঝখানে।

সবার দেশ/কেএম