রায় নিয়ে আপিলে টানাপোড়েন
পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয় সংসদের হাতে দেয়া যেতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল
পঞ্চদশ সংশোধনীর হাইকোর্টের রায় নিয়ে আপিল বিভাগের চলমান শুনানিতে নতুন মোড় এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ সংবিধানের ৫৪টি ধারা পরিবর্তন করে ২০১১ সালে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে শুনানি চলাকালে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান—কিছু বিষয় ভবিষ্যৎ সংসদের বিবেচনায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।
এদিন শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন—জামায়াতে ইসলামীপক্ষের আইনজীবীরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, অর্থাৎ শুনানি শেষ না করে তা নতুন সংসদের হাতে ছেড়ে দেয়া—এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের মত কী?
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তারা চান শুনানি শেষ হোক এবং আপিল বিভাগ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ রায় আসুক। তবে আদালত উল্লেখ করেন, আগের আপিল বিভাগের মতো এমন কোনও রায় দিতে চান না যা ভবিষ্যতে প্রশ্নের মুখে পড়ে। বিচারপতি আরও বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন আপিল বিভাগ গঠিত হবে। সেখানে যদি শুনানির সুযোগ দেয়া হয় অথবা দীর্ঘ মুলতবি করা হয়, তাহলে সব পক্ষই সুবিধা পাবে।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, তারা আজই শুনানি শেষ করতে প্রস্তুত। পরে আদালত মামলার পরবর্তী শুনানি ৫ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের ৫৪টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে দুটি পৃথক রিট করা হয়—একটি সুজন সম্পাদকসহ পাঁচজনের এবং আরেকটি নওগাঁর বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেনের।
দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করে। তাতে সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা, আর যুক্ত হওয়া ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদকে সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি পুনর্বহাল করা হয় গণভোট সম্পর্কিত ১৪২ অনুচ্ছেদ। তবে পুরো সংশোধনী বাতিল না করে অন্যান্য অংশ সংসদের বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্তের সুযোগ রাখে হাইকোর্ট।
এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক আপিল করা হয়—একটি সুজন সম্পাদক ও অন্যান্যদের, একটি মোফাজ্জল হোসেনের এবং একটি জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেলের। ৩ ডিসেম্বর থেকে আপিল বিভাগে ধারাবাহিক শুনানি শুরু হয়, যা ৪, ৭, ৮ ও ১০ ডিসেম্বর অব্যাহত থাকে। সুজনপক্ষের হয়ে শুরুতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ এ সংশোধনী নিয়ে আদালত, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যে আলোচনা তীব্র হচ্ছে। মামলাটি নতুন আপিল বিভাগে গেলে এর রায়ের ওপর জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।
সবার দেশ/কেএম




























