শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে শেষ হলো জাকসু নির্বাচন, অভিযোগে উত্তেজনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন বড় কোনো সংঘাত ছাড়াই শেষ হলেও কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে শেষ মুহূর্তে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ক্যাম্পাসে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আট কেন্দ্রের ৮১০টি বুথ এবং ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোট গ্রহণ হয়। মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষার্থী। বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী ছিলেন।
ভোট গ্রহণ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিলো। তবে বিকেলের দিকে ভোট বর্জন ঘোষণা করে ছাত্রদল প্যানেল। তাদের অভিযোগ, অন্তত ৯টি অসঙ্গতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কারচুপি হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ সমর্থিত প্যানেলও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর অনাস্থা জানায়। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শিবির সমর্থিত প্যানেল অভিযোগ করেছে, ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীরা ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। এতে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা নির্বাচনের শেষ দিকে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
নির্বাচনী অব্যবস্থাপনা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে একাধিক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারেই ভোট দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। অমোচনীয় কালি ব্যবহার না হওয়া, একটি আবাসিক হলের ব্যালটে প্রার্থীর নাম না থাকা এবং জাল ভোট পড়ার মতো ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ ছাত্রী, বাকিরা ছাত্র। ভিপি পদে কোনো নারী প্রার্থী ছিলেন না। জিএস পদে ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দুইজন নারী। চারটি পদে কোনো নারী প্রার্থীই ছিল না। সবগুলো হল সংসদ মিলিয়ে নারী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশে। এমনকি মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫টি পদে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
এবারের নির্বাচনে মোট আটটি প্যানেল অংশ নেয়। ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেন ভিপি পদে শেখ সাদী হাসান এবং জিএস পদে তানজিলা হোসেন বৈশাখী। বাগাছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’-এর নেতৃত্বে ছিলেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আব্দুর রশিদ জিতু এবং জিএস পদে মো. শাকিল আলী। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী ছিলেন আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস মাজহারুল ইসলাম।
ছাত্র ইউনিয়নের ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদে শরণ এহসান, এজিএস (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং এজিএস (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি অংশ নেন। তবে এ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা আদালত বাতিল করে।
অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্ট সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্যদে’ জিএস পদে জাহিদুল ইসলাম ঈমন এবং এজিএস (নারী) পদে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দিনভর ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও একের পর এক অভিযোগে জাকসু নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তার আবহ থেকে গেছে।
সবার দেশে/কেএম




























