মিয়ানমার অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, সেনাপ্রধানের নিয়ন্ত্রণ অটুট
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে নামমাত্রভাবে ক্ষমতা বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে হস্তান্তর করেছে। তবে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ধরে রেখে দেশটির মূল ক্ষমতা নিজের হাতেই রেখেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
প্রকাশিত ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার যে ডিক্রি জারি করা হয়েছিলো, তা বাতিল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন ও নির্বাচনের জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছে।
সরকারি মুখপাত্র জাও মিন তুন জানান, সাতবার বাড়ানো জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা তুলে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাস হলো নির্বাচনের প্রস্তুতির সময়।
প্রকৃত ক্ষমতা পরিবর্তন নয়
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পদক্ষেপে বাস্তব পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সেনা অভ্যুত্থানের নেতা মিন অং হ্লাইং এখনো সামরিক বাহিনী ও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসনের মতে, এটি কেবল পুরোনো শাসনব্যবস্থাকে নতুন নামে সাজানোর চেষ্টা। অদূর ভবিষ্যতে কোনো প্রকৃত পরিবর্তনের আশা নেই।
গৃহযুদ্ধের ছায়া
২০২১ সালে অং সান সু চির সরকারকে উৎখাতের পর থেকে মায়ানমার গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। সামরিক বাহিনী দেশজুড়ে বিদ্রোহ দমনে লড়াই করছে, তবে শক্তিশালী জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী ও নতুন প্রতিরোধ আন্দোলন সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ও দেশের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
জান্তা গত বছর জাতীয় আদমশুমারি চালিয়ে ভোটার তালিকা তৈরির চেষ্টা করলেও ৩৩০টির মধ্যে মাত্র ১৪৫টি শহরে তা সম্ভব হয়েছে। এটি দেশজুড়ে সেনাদের নিয়ন্ত্রণহীনতার ইঙ্গিত দেয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী ছয় হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষকে নির্বিচারে আটক করেছে। ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জান্তা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে এবং পশ্চিমা ‘ভুয়া প্রচার’ বলে উল্লেখ করে।
অঅরও পড়ুন <<>> মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচন
নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলছে পশ্চিমা দেশগুলো
পশ্চিমা দেশগুলো আসন্ন নির্বাচনকে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কৌশল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো হয় নিষিদ্ধ, নয়তো অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে সেনা-সমর্থিত দলগুলোর আধিপত্য নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মায়ানমারের শান্তি ও উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।
অভ্যুত্থানের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক
২০২১ সালের অভ্যুত্থানকে বৈধতা দেয়ার জন্য সেনারা দাবি করে, নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছিলো। যদিও অং সান সু চির দল বিপুল ভোটে জয়ী হয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা কোনো প্রমাণ পাননি যা ফলাফল পরিবর্তন করতে পারতো।
এখন প্রশ্ন রয়ে গেছে, এ অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণার মধ্য দিয়ে কি নতুন কোনো রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হবে, নাকি পুরোনো শাসনই নতুন মুখোশে চলবে।
সূত্র : রয়টার্স
সবার দেশ/কেএম




























