‘ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের এজেন্ডা তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবেন’

লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। শুক্রবার (১৩ জুন) তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে কী আলোচনা হতে পারে— জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, মিটিংটার কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাট নেই। যেহেতু তারেক রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং প্রফেসর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, তারা নিজেদের মতো করে বসবেন, আলাপ হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের ঘোষিত সময়সূচি, জুলাই চার্টার্ড, বিভিন্ন সংস্কার— এসব যেকোনও ইস্যু নিয়েই আলোচনা হতে পারে।

দুজনের মধ্যে বৈঠক নিশ্চিত করে প্রেস সচিব জানান, কী বিষয়ে আলাপ হবে, সেটি তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের পাঠানো চিঠি পেয়েছে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন। মঙ্গলবার (১০ জুন) হাইকমিশনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। একটা চিঠি এসেছে।

এর আগে রোববার (৮ জুন) সময় সংবাদকে ফোনে শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, টিউলিপের কোনও চিঠি আমরা পাইনি। ৫ জুন থেকে আমরা ছুটিতে আছি। তবে সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে তিনি চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে কি না— জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, চিঠির বিষয়টি একটি লিগ্যাল ইস্যু এবং এটি আইনিভাবেই জবাব দেয়া হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ -এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের এমপি ও সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডন সফরকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সৃষ্ট ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে টিউলিপ এ সাক্ষাতের অনুরোধ করেছেন।

প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনার ভাগনি। তার খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ও তার মা বাংলাদেশ সরকার থেকে ৭,২০০ বর্গফুটের একটি প্লট অবৈধভাবে নিয়েছেন। তবে টিউলিপ এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীরা এ অভিযোগকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

সফরের শুরুতেই লন্ডনের একটি হোটেলে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি)-এর ব্যানারে একদল ব্রিটিশ এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এতে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শ। বৈঠকে বিমান প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চার দিনের এ সরকারি সফরে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।

এই সফরে ড. ইউনূস ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বাকিংহাম প্যালেসে সাক্ষাৎ করবেন এবং ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত এপিপিজি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই এমপি— ড. রূপা হক ও আপসানা বেগম। তবে টিউলিপ সিদ্দিক ওই বৈঠকে অংশ নেননি।

সবার দেশ/কেএম