বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান ছাড়া দেশের পুনর্গঠন সম্ভব নয়: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাই আমরা বলছি—বিচার, কাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন সংবিধানই এ দেশের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি। এই তিনটির মাধ্যমেই বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার (৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় উপস্থিত নওগাঁবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এতে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। দলটির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৬৪ জেলায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি চলছে। সে ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই আমাদের এ নওগাঁ সফর।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু বলছি না, বরং মানুষের কথা শুনছি। শহীদ পরিবারের কথা শুনছি, সাধারণ মানুষের যন্ত্রণার কথা শুনছি। যখন নওগাঁয় প্রবেশ করলাম, দেখলাম রাস্তাঘাটের কী অবস্থা। অথচ গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখে শুধু উন্নয়নের বুলি শুনে এসেছি। বাস্তবে যা হয়েছে, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, এ প্রতারণার সময় শেষ। আমরা আর নতুন করে কাউকে প্রতারণার সুযোগ দেব না। জাতীয় নাগরিক পার্টি মিথ্যা আশ্বাসের রাজনীতি করে না। আমরা বিশ্বাস করি সময়ের বাস্তবতা ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকেই আমাদের মতো সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছে। একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়তে হয়েছে আমাদের।

এ সময় তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান পেয়েছে। আমরা সে বিকল্প নেতৃত্বেরই প্রস্তাব দিচ্ছি। আপনাদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে। বিগত ১৬ বছর ধরে এ দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী দমন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নওগাঁয়ও বহু মানুষ নিপীড়িত হয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারিনি। এবারের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অর্জন আমরা হারাতে দেব না। আমরা কেবল স্বাধীনতাই নয়, কাঠামোগত সংস্কারও আনব। স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এভাবেই জুলাই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব।

পথসভায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নওগাঁ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মুনিরা শারমিন বলেন, ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পরিণতি আপনারা দেখেছেন। নওগাঁয় উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত ক্লাস চালু করতে হবে। আমি নওগাঁর মানুষ হিসেবে প্রত্যাশা করি আপনারা এনসিপির পাশে থাকবেন।

জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের ভাইকে দিনের আলোতে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য গণহত্যার পরও এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। বাংলাদেশের মানুষকে শান্ত করতে হলে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে, এ সরকারের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার বিচার এ দেশের মাটিতেই করতে হবে।

পথসভাটি পরিচালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসউদ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

পথসভায় অংশগ্রহণের আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা ঐতিহ্যবাহী ভ্যানগাড়িতে চড়ে শহরের বালুডাঙা বাসস্ট্যান্ড থেকে রুবির মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। এরপর তারা পায়ে হেঁটে নওজোয়ান মাঠে পৌঁছে পথসভায় যোগ দেন।

সারা পথজুড়ে দালালি না রাজপথ, দিল্লি না ঢাকা, দিল্লি না নওগাঁ, আপোষ নয় সংগ্রাম, জনতার শক্তি না ক্ষমতার অহংকার, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নওগাঁ শহর।

সবার দেশ/এফএস