জামায়াতে নয়, এনসিপিতে আগ্রহ বিএনপির: সালাহউদ্দিন

বিএনপির নির্বাচনী কৌশলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আর জায়গা পাচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে এবার জোট গঠনের কোনো প্রয়োজন অনুভব করছি না। অতীতে কৌশলগত কারণে জোট হলেও এখন আমরা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এনসিপির মতো দলের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন ইঙ্গিত দেন, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কীভাবে এবং কার সঙ্গে জোট হবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। সময়ই বলে দেবে।

ঐকমত্যে ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ

সংস্কারপ্রস্তাব নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর আলোচনার ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ আলোচনা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্তে আসা উচিত। আলোচনা যত দীর্ঘ হয়, তত জটিলতা বাড়ে।

তিনি জানান, বিএনপি আশা করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে। সালাহউদ্দিন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যত ফিরে এসেছে, এখন শুধু সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের অপেক্ষা।

তত্ত্বাবধায়কের প্রধান কে হবেন?

সাবেক প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্বিধা থাকায় বিকল্প নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান সালাহউদ্দিন। যদি বিকল্প না পাওয়া যায়, তাহলে বর্তমানে থাকা কাঠামোই বহাল থাকবে, বলেন তিনি।

পিআর ব্যবস্থার ঘোর বিরোধিতা

আসন্ন নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সালাহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এখনও সে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। এ পদ্ধতিতে ভোটাররা নিজ এলাকার প্রতিনিধিকে ভোট দিতে পারবেন না, ফলে গণতান্ত্রিক সংযোগ হারাবে। এতে দুর্বল সরকার গঠিত হবে।

তিনি যুক্তি দেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পিআর ব্যবস্থায় বঞ্চিত হবেন। আর ছোট দলগুলো কম ভোট পেয়েও বেশি আসন পাবে। এটা অনৈতিক এবং অগণতান্ত্রিক।

আওয়ামী লীগকে ‘মাফিয়া সংগঠন’ আখ্যা

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আর রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি মাফিয়া সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। ১৯৭৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তাদের ইতিহাস গণতন্ত্রবিরোধী।

‘জনসমর্থনই মূল শক্তি’

ছোট দলগুলোর রাজনৈতিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেও সালাহউদ্দিন বলেন, নতুন দলগুলোকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু রাজনীতিতে জনসমর্থনের ভিত্তিতেই প্রকৃত ওজন নির্ধারিত হয়।

তিনি আরো বলেন, জোটসঙ্গীদের মধ্যেও দরকষাকষির অংশ হিসেবে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সেটা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারই অংশ।

সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে স্পষ্ট—বিএনপি এখন জামায়াতকে কৌশলগতভাবে পাশে রাখতে চায় না, বরং নতুন ও বিকল্প ধারার দল যেমন এনসিপি, তাদের সঙ্গে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সংলাপে আগ্রহী। সে সঙ্গে ঐকমত্যের দীর্ঘসূত্রতা ও পিআর ব্যবস্থার সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে তার কণ্ঠে ছিল কঠোর সতর্কতা ও স্পষ্ট বার্তা।

সবার দেশ/কেএম