Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৩২, ৭ অক্টোবর ২০২৫

আ.লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আলোচ্য

সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের গোপন বৈঠক

সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের গোপন বৈঠক
ছবি: সাবের হোসেন চৌধুরী, হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস ও ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেছেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে সাবের হোসেনের নিজ বাসভবনে, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে।

বৈঠকে অংশ নেয়া রাষ্ট্রদূতরা ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলা। তিনটি দেশই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ হিসেবে পরিচিত এবং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ হওয়ার পর দলটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না এবং দলটি কীভাবে তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারে।

সূত্র জানায়, বৈঠকটি সকাল নয়, বরং দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয়ে বিকেল প্রায় ৫টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক শুরুর আগে রাষ্ট্রদূতরা সাবের হোসেনের বাসভবনে প্রবেশ করেছিলেন ফ্ল্যাগ বা কূটনৈতিক স্বাক্ষরবিহীন গাড়ি ব্যবহার করে, যাতে নজর এড়ানো যায়। বৈঠক শেষে তারা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে বাসভবন ত্যাগ করেন। এ ধরনের গোপনীয়তা সাধারণ কূটনৈতিক বৈঠকের ক্ষেত্রে দেখা যায় না, তবে বর্তমান রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে এটি বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলো।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো নির্বাচনের মাঠে সমতা নিশ্চিত করা, দলীয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করা, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি ও সমর্থন নিশ্চিত করা। নর্ডিক রাষ্ট্রদূতরা আশ্বস্ত করেছেন যে, যদি বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে দলের কার্যক্রমে সুযোগ প্রদান করা হয়, তবে তা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও খেলাধুলার মাঠে সমতার জন্য সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বৈঠকটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈদেশিক কূটনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। আন্দোলনের ফলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন, এবং দলটির কিছু নেতা বিদেশে আশ্রয় নেন। সাবের হোসেন চৌধুরী নিজেও ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে গুলশান থেকে গ্রেফতার হন, তবে জামিনে মুক্তি পান। এর মধ্যেই তিনি তৎকালীন সরকারের কার্যক্রমে নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সংযোগ রেখেছেন।

এর আগে গত ১১ মে, সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসভবনে গোপনে বৈঠক করেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। ওই বৈঠকেও আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বৈঠকের বিষয়বস্তু প্রকাশ না করলেও সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালানোর প্রচলিত কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করে।

সাবের হোসেন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে নর্ডিক দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিল, টেকসই উন্নয়ন এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধান অংশীদার। এ দেশগুলো সরকারের পাশাপাশি দলীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংযোগ রাখার অভিজ্ঞতা রাখে, যা বর্তমান বৈঠকে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নির্বাচন পরিচালনা, রাজনৈতিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, কূটনীতিকরা দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়া এবং জনগণের সহমত জানার পাশাপাশি রাজনৈতিক পুনর্গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নেতা-নেত্রীদের নিরাপত্তা বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের বৈঠক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এটি আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থান ও তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পরিকল্পনা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, এ বৈঠক আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং নির্বাচনের মাঠে সমতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিদেশি কূটনীতিকদের নজরদারি এবং সহযোগিতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন নর্ডিক রাষ্ট্রদূতের এ বৈঠক সে প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

সূত্র জানিয়েছে, বৈঠক শেষে কোনও পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা বিষয় খোলাসা করেনি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বৈঠক দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য প্রভাবশালী হতে পারে।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে এ বৈঠক দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে যে নতুন দিক নির্দেশনা আনতে পারে, তা এখন জাতীয় পর্যবেক্ষক এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের নজরে রয়েছে।

সবার দেশ/কেএম

শীর্ষ সংবাদ:

পাঁচ অস্ত্রসহ গ্রেফতার লিটন গাজী সম্পর্কে সব জানালো পুলিশ সুপার
আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যবস্থাপক গ্রেফতার
লালমনিরহাটে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের যাবজ্জীবন
ভোলাহাটে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু
সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দালাল চক্রের খপ্পরে
বাংলাদেশ সীমান্তে পঁচছে ৩০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ
সুদের টাকার জন্য নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার-১
ইমরান খান বেঁচে আছেন, দেশ ছাড়তে চাপ: পিটিআই
হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের প্লট দুর্নীতি মামলার রায় আজ
শুরু হলো বিজয়ের মাস
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত
খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে হাসপাতালে জামায়াত সেক্রেটারি
স্কুল ভর্তির লটারি ১১ ডিসেম্বর
বিডিআরকে দুর্বল করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড
ছয় উপসচিবের দফতর পরিবর্তন