পালিয়েছেন আবদুল হামিদ: পর্দার আড়ালে কী ডিল হলো?
সাবেক রাষ্ট্রপতির পালানোকে ঘিরে জোর গুঞ্জন, সরকারের ভেতরকার শক্তির দ্বন্দ্ব নাকি বিদেশি চাপ?

একদিকে রাজপথে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান—এ দ্বন্দ্বপূর্ণ সময়ে হঠাৎ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের গোপনে দেশত্যাগ দেশজুড়ে সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক শোরগোল।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এ দেশত্যাগ কি শুধুই পালানো, নাকি এর পেছনে ছিলো একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক সমঝোতা বা ‘গোপন ডিল’?
ডিলের ছায়া: কে কাকে ছাড় দিলো?
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামোতে থাকা সাবেক সেনা, আমলা ও বিরোধীদলপন্থী উপদেষ্টারা দীর্ঘদিন ধরে একটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন—আওয়ামী আমলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থেকে আবদুল হামিদ অনেক ফৌজদারি অপরাধে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, অর্থ পাচার, রাষ্ট্রীয় সুবিধা অপব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ ঘুরে বেড়াচ্ছিলো।
তবুও, ঠিক যখন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তখন এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটি কীভাবে ‘নির্বিঘ্নে’ দেশ ছাড়লেন?
ইমিগ্রেশন পার, আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই!
আবদুল হামিদের লাল কূটনৈতিক পাসপোর্ট এখনও সচল। অথচ সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেরই পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে। আদালত বা ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকেও কোনও বাধা ছিলো না। বরং পুলিশ ও ইমিগ্রেশন কর্তারা ‘সবুজ সংকেত’ দিয়ে তার গোপন প্রস্থানের পথ সুগম করে দেয়।
এ থেকে অনেকের ধারণা, একে ‘নিরাপদ প্রস্থান’ গ্যারান্টির অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে—যার মাধ্যমে তিনি হয়তো রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ‘নীরব সহযোগী’ ছিলেন।
বিদেশি চাপ, নাকি অন্তর্ঘাত এড়ানোর কৌশল?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকার চায় না ক্ষমতাচ্যুতদের সবাই একসাথে বন্দী হোক। এতে আন্তর্জাতিক মহলে ‘বিচার নয়, প্রতিশোধ’ বার্তা যেতে পারে। তাই কিছু চাবিকাঠির মানুষকে বের করে দেওয়ার কৌশল নেয়া হয়েছে।
আরেকটি ব্যাখ্যা—আবদুল হামিদ অনেক ‘গোপন দলিল’ ও সংলাপের সাক্ষী ছিলেন। তাকে দেশে রাখলে তিনি হয়তো কারও বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতেন বা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যেতে পারতেন। তাই তার ‘বিদায়’ একটি বোঝাপড়ার ফল।
তদন্ত, না লোক দেখানো নাটক?
তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণাও এসেছে, তবে সাধারণ মানুষের সন্দেহ—তদন্ত হবে, কিন্তু আসল কিছু প্রকাশ পাবে না। আগেই তো পাসপোর্ট, ইমিগ্রেশন, ফ্লাইট ও নিরাপত্তা—সব ছিলো সাজানো। তদন্ত হবে কাদের বিরুদ্ধে? কয়েকজন এসআই, এএসআই আর থানার ওসি?
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ যেন পর্দার আড়ালের নাটকের সূচনা। এর পেছনে থাকা বাস্তব ‘চুক্তি’ হয়তো খুব শিগগিরই প্রকাশ পাবে না। তবে এটুকু পরিষ্কার, একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি যখন লুঙ্গি পরে রাতের আঁধারে পালান, তখন দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন কোন মহাযুদ্ধেরই ইঙ্গিত মেলে।
সবার দেশ/কেএম