রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান
সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের মহামারি: সর্বোচ্চ টার্গেট ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরেই চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে দেশের অন্যতম ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা *রিউমর স্ক্যানার-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, শুধু ড. ইউনূসকে নিয়েই এ মাসে ২৯টি বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। যার ৮৩ শতাংশ ছিলো সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে—এমন ধরনের।
অপতথ্য ছড়ানোর শিকার মূলত সরকার ও উপদেষ্টারা
রিউমর স্ক্যানার আরও জানিয়েছে, এপ্রিলজুড়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে ১২টি অপতথ্য ছড়িয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি এসব তথ্য দুই ভাগে ভাগ করে দেখেছে—সরকারপন্থী ইতিবাচক ভুল তথ্য এবং সরকারবিরোধী নেতিবাচক অপতথ্য। ১২টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নেতিবাচক ঘরানার, যার মাধ্যমে সরকারকে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে।
এছাড়া, সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়েও বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ানোর নজির মিলেছে। যেমন:
- ড. আসিফ নজরুল – ৩টি ভুল তথ্য
- আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া – ২টি
- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান – ২টি
- আ ফ ম খালিদ হোসেন, শেখ বশিরউদ্দীন ও শফিকুল আলম – প্রত্যেককে নিয়ে ১টি করে ভুল তথ্য
সর্বমোট ভুল তথ্য: ২৯৬টি, জাতীয় ও রাজনৈতিক বিষয়েই বেশি
এপ্রিল মাসে মোট ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যা মার্চ মাসের (২৯৮টি) তুলনায় সামান্য কম। এসব ভুল তথ্যের মধ্যে:
- জাতীয় বিষয় – ১০১টি (৩৪%)
- রাজনৈতিক বিষয় – ৯৫টি
- আন্তর্জাতিক – ৩৮টি
- ধর্মীয় – ২৭টি
- বিনোদন/সাহিত্য – ৮টি
- শিক্ষা – ৭টি
- প্রতারণা ও খেলাধুলা – ১৯টি
ভুলের ধরন ও উৎস: তথ্য ১৩৮, ভিডিও ১০৫, ছবি ৫৩
চলতি মাসে ছড়ানো ভুল তথ্যের মধ্যে তথ্যভিত্তিক ভুল ছিলো সবচেয়ে বেশি (১৩৮টি), এরপর ভিডিওভিত্তিক ভুল (১০৫টি) এবং ছবিভিত্তিক বিকৃতি (৫৩টি)।
প্রকৃতি অনুযায়ী:
- মিথ্যা – ১৮০টি
- বিভ্রান্তিকর – ৬৬টি
- বিকৃত – ৪৮টি
- সার্কাজম বা হাস্যরস – ২টি
কোন প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে বেশি?
রিউমর স্ক্যানারের তথ্যমতে, ফেসবুকেই ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য—সংখ্যায় ২৭৬টি। এছাড়া:
- ইউটিউব – ৫৪টি
- ইনস্টাগ্রাম – ৪৮টি
- এক্স (টুইটার) – ৪৪টি
- টিকটক – ২৪টি
- থ্রেডস – ১৩টি
এমনকি দেশের ১৪টি সংবাদমাধ্যমেও ভুল তথ্য ছড়ানোর ঘটনা পাওয়া গেছে।
ভারতের মাধ্যম থেকেও বাংলাদেশবিরোধী অপতথ্য
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ভারতের কিছু গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশবিরোধী অপতথ্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু ড. ইউনূস বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নির্বাহী, তাই রাজনৈতিক মেরুকরণে তাকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।
সবার দেশ/কেএম