কুলাউড়ার বিতর্কিত ওসি আপছার অবশেষে হবিগঞ্জে বদলি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার আলোচিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছারকে চতুর্থ দফায় বদলি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা এ কর্মকর্তাকে এবার সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমানের নির্দেশে হবিগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়। এর আগে দুই দফায় বদলি হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি কুলাউড়ায় বহাল ছিলেন, যা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছিলো।
পুলিশ সুপারের অফিস সূত্র জানায়, গত ৯ জুলাই প্রথমে তাকে বড়লেখা থানায় বদলি করা হলেও পরদিনই ডিআইজির নির্দেশে বদলি আদেশ সংশোধন করে হবিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওসি আপছারের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি, মামলার এজাহারে টাকা নিয়ে নাম বাদ দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যার তদন্ত করে সত্যতা পান সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড ট্রাফিক) মো. আমিনুল ইসলাম।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসে কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে চোরাকারবারিদের দ্বন্দ্বে নিহত হন জাবেল মিয়া। নিহতের পিতা রহমত আলী মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও ওসি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চিহ্নিত কয়েকজন চোরাকারবারীর নাম বাদ দেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের পরিবার। নিহতের স্ত্রী সাজনা বেগম বলেন, এজাহারে সুমন ও জায়েদদের নাম থাকা সত্ত্বেও টাকা খেয়ে তা বাদ দিয়েছেন ওসি। বর্তমানে মামলার মূল আসামিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এছাড়া জানা গেছে, কুলাউড়া থানায় যোগদানের পর ওসি গোলাম আপছার নিজ জেলার কয়েকজন এসআই ও এএসআইদের নিয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। বিভিন্ন মামলায় নিরীহ লোকজনকে আসামি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় শীর্ষ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, বিগত সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুটি মামলায় তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিরপরাধদের আসামি করেন। অনেক এসআই তার নির্দেশ না মানায় তাদের ক্লোজড করানোর জন্য পুলিশ সুপারের প্রভাবও খাটান বলে অভিযোগ।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি গোলাম আপছার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। শরীফপুর হত্যাকাণ্ডে বাদীর দেয়া এজাহার অনুযায়ীই মামলা রুজু হয়েছে এবং তিনি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকেও গ্রেফতার করেছেন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওসি গোলাম আপছার তার কোনও আত্মীয় নন এবং বদলিটি রুটিনমাফিক। অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। পাশাপাশি পুলিশের কেউ সেবা নিতে আসা জনগণের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বাসিন্দা গোলাম আপছার ১৯৯৩ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি কুলাউড়া থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জে পিবিআইতে ওসির দায়িত্বে ছিলেন। কুলাউড়ায় থাকাকালে তাকে কেন্দ্র করে একাধিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যা তার বদলির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সবার দেশ/কেএম




























