রাজশাহীতে ৩২ ঘণ্টার মহাকাব্যিক অভিযান
শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার
রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে টানা প্রায় ৩২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর জীবিত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে উদ্ধারকর্মীরা শিশুটিকে পাইপের গভীর অন্ধকার থেকে তুলে আনেন। বর্তমানে তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান নিশ্চিত করেছেন যে শিশুটি জীবিত আছে এবং তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় কোয়েলহাট গ্রামে বুধবার দুপুরে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। মায়ের হাত ধরে হাঁটার সময় পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যায় ছোট্ট সাজিদ। গর্তটি খড় দিয়ে ঢেকে রাখা ছিলো, ফলে মা রুনা খাতুন বুঝতেই পারেননি নিচে প্রাণঘাতী ফাঁদ অপেক্ষা করছে। সন্তান হঠাৎ হাতছাড়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ‘মা’ ডাক শুনে ফিরে তাকান; দেখেন, সাজিদ অন্ধকার গর্তে পড়ে গেছে।
স্থানীয়রা প্রথমে নিজেদের উদ্যোগে উদ্ধার চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন। পরে খবর পেয়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করে। প্রথমে চার্জড ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রায় ৩৫ ফুট গভীরে অনুসন্ধান চালানো হয়, কিন্তু শিশুটির অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।
এরপর রাতভর এস্কেভেটর দিয়ে নলকূপের পাশ থেকে প্রায় ৩৫ ফুট গভীর বিশাল গর্ত খনন করা হয়। সকালে সেখান থেকে নলকূপের দিকে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার চেষ্টা চালানো হলেও মিলেনি কোনও চিহ্ন। কয়েকবার ক্যামেরা নামিয়েও কেবল মাটিই দেখা যায়। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলেও হাল ছাড়েনি ফায়ার সার্ভিস।
শেষপর্যন্ত নতুনভাবে খনন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা পরিশ্রম, মাটি খনন, সুড়ঙ্গ তৈরি এবং নিখুঁত সমন্বয়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে সবাইকে আবেগে ভাসিয়ে শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরখানেক আগে সেচের জন্য নলকূপটি খোঁড়া হয়েছিলো। পানি না ওঠায় মালিক পরে মুখটি মাটি দিয়ে ঢেকে রাখলেও সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে গিয়ে গর্তটি আবার উন্মুক্ত হয়ে পড়ে—যা পরিণত হয় ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্থানে।
মা রুনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিনি বুঝতেই পারেননি যে খড়ের নিচে গভীর নলকূপের মুখ লুকিয়ে আছে। হাঁটার সময় মাত্র এক মুহূর্তের ভুলেই জীবন ঝুঁকিতে পড়ে শিশুটির।
অবশেষে ফায়ার সার্ভিসের অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টায় ছোট্ট সাজিদের জীবন রক্ষা পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে পুরো এলাকায়। অভিযানের পুরো সময় জুড়ে ঘটনাস্থলে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ।
সবার দেশ/কেএম




























