হাসিনা-ইউনূস দ্বন্দ্বে আমি ‘বলির পাঠা’: টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি এবং সাবেক সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলির পাঠা হয়েছেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধের জেরে তার জীবন ও ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

টিউলিপ জানান, জানুয়ারিতে পদত্যাগের পর এক সপ্তাহ আগে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি তার মা, ভাই ও বোনের জন্য পূর্বাচলে জমি নিয়েছেন। ১১ আগস্ট তার ও আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর তারিখ ঠিক করা হয়েছে। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা ভিডিও কনফারেন্সে হাজির হবেন কি না, তা এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।

তিনি বলেন, আমি যেন এক কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্নে আটকে আছি—যেখানে বিদেশে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে অথচ আমি জানি না অভিযোগ কী। কাফকায়েস্ক পরিস্থিতি বলতে জটিল, অযৌক্তিক ও নিপীড়নমূলক আমলাতান্ত্রিক অবস্থা বোঝায়।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে পরিস্থিতি নতুনভাবে বিবেচিত হতে পারে। লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের জুলাইয়ে কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি সিটি মন্ত্রী হন, কিন্তু পাঁচ হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দ্রুত বদলে যায়। ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়, সহিংসতায় নিহত হয় হাজারো মানুষ। হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ভারত চলে যান।

টিউলিপ বলেন, তিনি খালার পক্ষে সাফাই গাইতে আসেননি, বরং বাংলাদেশের জনগণ যেন ন্যায়বিচার পায়, সেটিই তার কামনা। তার দাবি, ২০২৪ সালের শেষ দিকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কিছু অচেনা ওয়েবসাইটে খবর আসে যে তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৩ সালে মস্কোতে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার তোলা একটি ছবি নতুন করে আলোচনায় আসে। টিউলিপের ব্যাখ্যা, তিনি ও তার বোন কেবল বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং সফরের শেষ দিনে দুই মিনিটের জন্য পুতিনের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো।

আরেকটি অভিযোগ হলো—২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় একজন ব্যবসায়ী তাকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেন, যার সঙ্গে শেখ হাসিনার দলের ঘনিষ্ঠ লোকজনের যোগাযোগ ছিলো। টিউলিপের দাবি, ওই ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন এবং তাকে ভোটও দেননি।

এছাড়া প্রশ্ন ওঠে কেন তিনি নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেভেলপারের বাসায় ছিলেন। তার ব্যাখ্যা, নিরাপত্তা হুমকির কারণে হঠাৎ বাড়ি বদলাতে হয়েছিলো এবং পরিচিত একজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন।

মন্ত্রী থাকাকালে অভিযোগ ওঠার পর তিনি নিজেই স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে যান। দুই সপ্তাহের তদন্তে কোড লঙ্ঘনের প্রমাণ না মিললেও ম্যাগনাস মন্তব্য করেন—পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত ছিলো। টিউলিপ বলেন, আমি কার ভাগনি হয়ে জন্ম নেবো, সেটা তো আমার হাতে নেই।

স্টারমারের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও বিভ্রান্তি এড়াতে তিনি পদত্যাগ করেন। ভবিষ্যতে ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও অভিযোগ থামেনি। বাংলাদেশে নির্বাচন এখনও হয়নি এবং সহিংসতার প্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

টিউলিপ বলেন, যুক্তরাজ্যে সফরকালে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে যুক্তরাজ্যের অপরাধ দমন সংস্থা শেখ হাসিনা-সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির প্রায় ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করেছে, যার একটিতে তার মা থাকতেন। ‘এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই,’ বলেন তিনি।

সত্যি কথা বলতে, আমি ইউনূস-হাসিনা দ্বন্দ্বের বলির পাঠা মাত্র। বাংলাদেশে অনেকেই ভুল করেছে এবং তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, কিন্তু আমি তাদের একজন নই।

সবার দেশ/কেএম