রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি-স্মৃতি উদ্যাপন
বিশ্বকবির ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

আজ ২৫শে বৈশাখ, বাংলা সাহিত্যের সূর্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন। এ দিনে বাঙালির হৃদয়ে জাগে সৃষ্টির উৎসব, মননে ফোটে সৌন্দর্যের কমল, আর সংস্কৃতির আকাশে রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি ছড়ায় অপরূপ আলো।
তিনি শুধু কবি নন, একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক ও সমাজসংস্কারক—যার প্রতিটি পরিচয় বাঙালির গর্বের প্রতীক।
১২৬৮ সালের এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেন রবীন্দ্রনাথ। পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা সুন্দরী দেবীর সন্তান তিনি। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনার পিঠাভোগে বাস করতেন, কিন্তু জোড়াসাঁকোই তার সৃষ্টির কেন্দ্রভূমি। মাত্র আট বছর বয়সে কবিতার পঙ্ক্তি রচনা শুরু করেন তিনি, আর সে থেকে তার কলম থামেনি।
গীতাঞ্জলির জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে অমর করে দেন। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, আর ভারতের ‘জনগণমন’ তারই কালজয়ী সৃষ্টি।
রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতার পরিধি অসীম। তিনি ২ হাজারেরও বেশি গান রচনা করেন, যার অধিকাংশে নিজেই সুর দেন। তার আঁকা আড়াই হাজারের বেশি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে শোভা পাচ্ছে।
১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে তার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী হয়।
সাহিত্য ছাড়াও তিনি শিক্ষা, কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা, পূর্ববঙ্গের শাহজাদপুর ও পতিসরে কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তন—তার এ কর্মযজ্ঞ আজও প্রাসঙ্গিক।
আজ সারা বাংলাদেশে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শাহজাদপুর, দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে রবীন্দ্রমেলা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’।
রাজধানীতে শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনের উৎসব শুরু করছে, আর বাংলা একাডেমিতে বিকেলে হবে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লালমাটিয়ার গ্যালারি ইলিউশনে ‘২৫শে বৈশাখ’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ২৫ জন শিল্পীর কাজ প্রদর্শিত হবে, যা চলবে ১৭ মে পর্যন্ত।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আজও আমাদের পথ দেখায়। তার কবিতা, গান, চিত্রকর্ম ও দর্শন বাঙালির আত্মার সঙ্গে মিশে আছে। এ জন্মদিনে, আসুন তার অমর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, আর তার দেখানো পথে এগিয়ে যাই।
সবার দেশ/কেএম