Sobar Desh | সবার দেশ জয়নুল আবেদীন


প্রকাশিত: ০১:৫৯, ৫ জুলাই ২০২৫

প্রবন্ধ

মসজিদ আল কুবা

মসজিদ আল কুবা
ছবি: সবার দেশ

মক্কাসহ মদিনায় যে কয়দিন অবস্থান করেছি সে কয়দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দু'একটা খেজুর গাছ ছাড়া সবুজ বৃক্ষের সমারোহ তেমন একটা চোখে পড়েনি। উহুদের প্রান্তরসহ ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত মসজিদ এলাকায় আসার পর সবুজের সমারোহ চোখে পড়তে শুরু করে। রাসূল (স.) হিজরতে এসে মদিনায় প্রথম যে জায়গায় নামায আদায় করেন সে জায়গায় নির্মিত প্রথম মসজিদটিই মসজিদে কুবা। মক্কা থেকে মদিনা আসার পথে আমির আবদুল্লাহ নামক দ্বিতীয় রিংরোডে অতিক্রম করে উত্তর দিকের এলাকার নাম কুবা এলাকা। 

মসজিদে নববী থেকে কম-বেশি তিন কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে কুবা এলাকার নামানুসারে মসজিদের নামকরণ করা হয় কুবা মসজিদ। মসজিদের পশ্চিম দিকের সড়কের নামও কুবা সড়ক। হযরত (স.) চার দিবস কাল নজ্জার পরিবারের মাঝে বাস করছিলেন। তিনি উপাসনার জন্য কুবাতেই প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন'। আল্লাহ আল-কোরআনে তার উল্লেখ করেছেন: ‘অবশ্য যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে তা এর উপযোগী যে, তুমি তাতে নামাযের জন্য দাঁড়াবে। (সূরা তাওবা ১০৮)

রাসুল (স.) যখন হিজরত করেন তখন তিনি কুবায় বাণী আমর বিন আওফ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি কুলসুম বিন আল হেদামের ঘরে অবস্থান করেন। অতঃপর তাঁর উট বাঁধার খোলা জায়গাটি গ্রহণ করে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। রাসূল (স.) নিজেও লোকদের সাথে মসজিদ নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন এবং তাতে নামায আদায় করতে শুরু করেন। রাসূল (স.) বলেন-
- ‘জিবরাইল (আ.) কিবলার দিক নির্ণয় করেছিলেন, এ জন্য দুনিয়ার সমস্ত মসজিদ থেকে কুবাকে সঠিক কিবলা মুখী মসজিদ বলা হয়।’

শুরুতে কুবা মসজিদের কিবলা ছিল বাইতুল মোকাদ্দাসের দিকে। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নবীকে কা’বার দিকে নামায আদায়ের আদেশ দেন। তারপর কুবাবাসীরা মসজিদ পুনঃনির্মাণের ইচ্ছা করলে নবী (স.) নিজে দাগ টেনে কিবলার দিক নির্দিষ্ট করেন।

নানা কারণে মসজিদে নববীর পরেই এ মসজিদের সম্মান। কারণ, রাসূল (স.) নিজে কুবা মসজিদের নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন। কুবা মসজিদ অন্য আরেক কারণে স্মরণীয়। তা হলো, এখানেই সর্বপ্রথম জামায়াতের সাথে নামায আদায় করা হয়। আরো এক কারণে এ মসজিদ বিশেষ সম্মানের অধিকারী, তা হলো, সাহল বিন হুনাইফ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন-
- যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে কুবায় পৌঁছে দু’রাকাত নামায আদায় করবে, সে ওমরার সমান সওয়াব পাবে। (মুসতাদরাকে হাকেম ৩/১২)

মসজিদে কুবায় প্রবেশ করে আমরা দুরাকাত নামায আদায় করি। কারণ, এখানে নামায আদায় করলে ভিন্ন রকমের ফজিলত পাওয়া যায়। অন্যান্য মসজিদের ন্যায় বিভিন্ন শাসকগণ বিভিন্ন সময় মসজিতে কুবার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সাধন করেছেন। ১৪০৫ হিজরিতে বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ (র.) কুবা মসজিদের স¤প্রসারণের পর এর পরিধি দাঁড়ায় ১৩৫০০ বর্গ মিটার। মসজিদে ৬৫টি ছোট ও ৬টি বড় গম্বুজসহ ৪টি মিনার তৈরি করেন। এ মসজিদে একসাথে ২০ হাজার লোক নামায আদায় করতে পারে।

এই মসজিদের বর্তমান ইমাম: ১। শেখ সালিহ্ বিন-আওয়াদ আল মুখামিসি ২। শেখ মুহাম্মদ খলিল ৩। শেখ মুহাম্মদ আইয়ুব ৪। শেখ মুহাম্মদ আদিল। প্রধান খতিব আহম্মেদ বিন আলী বিন আবদুর রহমান হুদাকি।

অঅরও পড়ুন <<>> সাত মসজিদের এলাকা

মসজিদের বাইরের সবুজ খেজুর বাগানের দিকে তাকালে মরুভ‚মির দেশ আরব দেশের কথা ভুলে যেতে হয়। মসজিদে কিবলাতাইন এলাকার চেয়েও অনেক বেশি গাছগাছালি রয়েছে এখানে। তা দেখে কখনো মনে হয় মালয়েশিয়ার পাম বাগানের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এ এলাকায় আসার পূর্ব পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন কিছু খেজুর গাছ ও নিম গাছ জাতীয় এক প্রকার ছোট ছোট গাছ ছাড়া আর কোনো ফল-ফসল বা বনজ গাছ বা বাগান চোখে পড়েনি। মদিনা মনোয়ারা থেকে অনুমান পঁচিশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে সবুজ ফসল ও ফলের ভালো চাষ হয় বলে জানা যায়। এরূপ এলাকাকে স্থানীয় ভাষায় ‘মাজরা’ বলে। অনেক ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও সময় ও সঙ্গীর অভাবে মাজরা এলাকায় যাওয়া হয়নি। সে অভাব কিছুটা পূরণ হয়েছে কুবা মসজিদ এলাকায় এসে। এখানে খেজুর গাছ ছাড়াও এখানে দেখা যাবে নানা প্রকারের জানা- অজানা পাতাযুক্ত ডালপালা বহুল বৃক্ষ। শুধু উপরের গাছের কথা বলছি না- পায়ের তলায় রয়েছে সবুজ কোমল ঘাস। পাইপ দিয়ে নিয়মিত পানি সরবরাহ করে ঘাসগুলো সতেজ ও সবুজ রাখা হচ্ছে। ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে ডালযুক্ত গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হবে ঢাকার কোনো পার্কের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি।

মসজিদে নববীব ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কয়েক'শ মিটারের মধ্যে ইসলামের বিখ্যাত তিন খলিফার স্মৃতি বিজড়িত তিন মসজিদের দক্ষিণ দিকে কয়েক’শ মিটারের মধ্যেই আরো দুটি মসজিদ রয়েছে যার একটির নাম আল- আন বারিয়া ও অপরটির নাম আল-ইজাবা মসজিদ। নববী মসজিদ থেকে কম-বেশি দশ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মক্কা-মদিনা ও জেদ্দা রোডে অবস্থিত মসজিদে মিকাত। মসজিদে মিকাতই নববী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত মসজিদ। সম্ভবত মক্কা মদিনার মাঝে এটাই মদিনার মিকাত এলাকা। মিকাত এলাকার নামানুসারে অত্র মসজিদের এ রকম নামকরণ করা হয়েছে।

লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক

শীর্ষ সংবাদ:

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া ভারতের মানবিক ঐতিহ্যের অংশ
ইলিয়াসের ২২ লাখ ফলোয়ারের ফেসবুক পেজ সরিয়ে নিলো মেটা
‘টিকটকে আসক্ত’ স্ত্রীকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে লাশ লুকালেন স্বামী
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ভারত
সব দেশপ্রেমী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান বিএনপির
লন্ডনে শহীদ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা
বিএনপির মাসুদ সরে দাঁড়ানো থেকে ফিরে এসে যা বললেন
ধানের শীষে নির্বাচনের জন্য দল ছাড়ছেন জোটের নেতারা
হাদির হত্যায় জাতিসংঘের নিন্দা: স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান
৯০-এর স্টাইলে রোমান্স চান অনন্যা
হাদি হত্যার প্রতিবাদে বেনাপোলে বিক্ষোভ ও ‘লং মার্চ টু বর্ডার’
দিনাজপুরে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ৬০ জন অসুস্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
জবিতে টেকসই উন্নয়নে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের উদ্বোধন
শহীদ ওসমান হাদির জানাজা আজ দুপুর দুইটায়
দেশে ফেরার পথে তারেক রহমান: পেয়েছেন ট্রাভেল পাস
বিশ্বশান্তির সারথীদের লাশ আসছে শনিবার
খালেদা জিয়ার অবস্থা এক মাসে সবচেয়ে স্থিতিশীল আজ: ডা. জাহিদ