মসজিদে গামামা

মদিনা পৌঁছার তৃতীয় দিন মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পূর্ব দিক প্রথম রিংরোডের বাইরে একটি খেজুরের মার্কেট থেকে খেজুর কিনে ফেরার পথে আমাদের গাইড সামসু ভাই সামনে একটি মসজিদের দিকে আঙুল তুলে- ঐটা মসজিদে মুসল্লা।

মসজিদে মুসল্লা কি কারণে বিখ্যাত?

এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ওখানে একটি ময়দান রয়েছে। যে ময়দানকে নবী করীম (স.) ঈদগাহ বানিয়েছিলেন। নবী (স.) প্রথমত ‘দারে শিফার’ ঈদের নামায আদায় করতেন। পরে ‘হাররায়ে দাউসে' নামায আদায় করার পর পরবর্তীতে মৃত্যুকাল পর্যন্ত মসজিদে মুসাল্লা নামক ঈদগাহে ঈদের নামায আদায় করে গেছেন।

নববীর খুব কাছে মাত্র কয়েক’শ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হযরত ওমর (রা.) ও হযরত আলী (ক.) এই তিন খলিফার নামে নামকরণ করে স্থাপন করা হয়েছে আরো তিনটি মসজিদ। এ তিন মসজিদের ঠিক কয়েক'শ মিটার উত্তরে রয়েছে মসজিদে গামামা। একই দিকে কম-বেশি দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদে মিকাত। নববী এলাকা থেকে সোজা উত্তর দিকে কম-বেশি সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে মসজিদে সৈয়দ আল-সুহাদা অবস্থিত। মসজিদে গামামা ও সৈয়দ আস-সুহাদা এ দু’মসজিদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মসজিদে কেবলাতান ও খন্দকের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সাত সাতটি মসজিদ। নববী থেকে এ দুটি মসজিদের দূরত্ব যথাক্রমে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও পৌনে দুই কিলোমিটার। 

নববী এলাকা থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে কম-বেশি তিন কিলোমিটার দূরে জুম’য়া মসজিদ অবস্থিত। জুম’য়া মসজিদে যাওয়ার পথে এক কিলোমিটার দূরে মসজিদে আল-ইজারাহ ও জুম’য়া মসজিদের পূর্বদিকে বিখ্যাত কুবা মসজিদ। মর্যাদার দিক দিয়ে মসজিদে নববীর পরেই মসজিদে কু’বার স্থান। আমরা যে কয়টা মসজিদ দেখেছি এ গ্রন্থে শুধু সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও ধর্মীয় মূল্যায়নের বিষয়ে আলোচনা করছি। এ গ্রন্থে মসজিদের যে দূরত্ব দেওয়া হয়েছে তা আনুমানিক। আনুমানিক দূরত্ব প্রকৃত দূরত্ব অপেক্ষা সামান্য কম-বেশি হতে পারে।

মসজিদে নববীর কাছেই আরো একটি মসজিদ দেখিয়ে বলেন-
- ঐটা, গামামা মসজিদ।
- ঐটার বিশেষ কি পরিচিতি রয়েছে?
গামাম শব্দের অর্থ ‘মেঘ’। বর্ণিত আছে। নবী (স.) একবার ঐ স্থানে পৌঁছার পর সাহাবায়ে কেরামগণ নবী করীম (স.)-এর কাছে মেঘের জন্য আল্লাহর কাছে অনুরোধ করতে বলেন। নবী (স.) আল্লাহর দরবারে মেঘের জন্য দোয়া করার পরপর বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। এর আশপাশে আরো কয়েকটি মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে মসজিদে আলী, মসজিদে আবু বকর ও মসজিদে ওসমান অন্যতম। এক সময় ঐ মসজিদগুলোর স্থানে খোলাফায়ে রাশেদার আমলে তিন সাহাবার বাড়ি ছিল। পরে তাদের স্মৃতিচারণের জন্য একেক জনের বাড়িতে একেকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

পরের দিন ২৩.৯.০৯ খ্রিস্টাব্দ সকাল সকাল বের হয়ে পড়ি। উদ্দেশ্য ইসলামিক স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান ও মসজিদ দর্শন। এসব স্থান পরিদর্শনের জন্য হোটেলের সামনে গাড়ি প্রস্তুত হয়েই থাকে। দর্শকেরও অভাব নেই। তাই গাড়ি রিজার্ভ করার প্রয়োজন পড়েনি। দেখতে না দেখতে সমমানের এক ট্রিপ প্যাসেঞ্জার হয়ে গেলো। এক সুদর্শন কেনিয়ান বৃদ্ধ লোক গাড়ির ড্রাইভার। সবাইকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভার সাহেব ঐতিহাসিক স্থান দেখার নিয়ম-কানুন বাতলে দিলেন। ড্রাইভারের বাতলানো নিয়মাবলি বাংলা করলে যা অর্থ দাঁড়ায় তা হলো-

-আমরা প্রথমে যাবো উহুদের ময়দানে, পরে পর্যায়ক্রমে যাবো মসজিদে কিবলাতাইন, সাত মসজিদ, মসজিদে কুবা ও মসজিদে জুম’আ। পরে সময় পেলে অন্যান্য স্থাপনাও দেখা যাবে। উহুদের ময়দানে গিয়ে শহীদদের জন্য দোয়া করবেন, প্রত্যেক মসজিদে দুই রাকাত করে নফল নামায আদায় করবেন। এসব করতে যে সময় লাগবে এর বেশি সময় নষ্ট করা চলবে না। সময় নষ্ট করলে এক যাত্রায় সব স্থাপনা দর্শন করা সম্ভব হবে না।

আমাদের দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশি হওয়ার ফলে কথাবার্তা ও আনন্দ-অনুভূতি প্রকাশে কোনো সমস্যা হয় নি।

লেখক: আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক