(প্রথম পর্ব)
রাজস্ব বিভাগের পুনর্গঠন ও সম্ভাবনা

অর্থই সকল অনর্থের মূল, আবার অর্থ ছাড়া কিছুই করা যায় না। তাহলে অর্থের অর্থ কি দাঁড়ালো? অর্থ আমাদের জীবনের এক বিরাট চালিকাশক্তি। ব্যক্তি জীবন, সংসার জীবন চালাতে অর্থের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী।
সংসার জীবন একটি সংগঠন, যা চালাতে নিত্য টাকার প্রয়োজন হয় তা সকলেই আমরা জানি। ঠিক তেমনি রাষ্ট্র হল বিরাট একটা সংগঠন, এ রাষ্ট্র নামক সংগঠনটিকে চালানোর জন্য অনেক অনেক অর্থের প্রয়োজন ।
এখন প্রশ্ন হল রাষ্ট্র চালাতে এ অর্থ তাহলে কিভাবে পাওয়া যায়? হ্যাঁ, আজ সে কথাই আলোচনা করবো।
রাষ্ট্রের অর্থের যোগান দেয় এর জনসাধারণ। সরকার জনগণের নিকট হতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ধারিত আয়করের মাধ্যমে জনসাধারণের আয়ের একটি অংশ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নিয়ে থাকে। অর্জিত এ অর্থ দিয়েই রাষ্ট্রের ব্যয়ভার নির্বাহ করা হয়, রাষ্ট্র চালানো হয়।
রাষ্ট্র বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন ধরনের কর নির্ধারণ করে থাকে, সে সম্পর্কে জনগণ অতটা অবহিত নন। কর সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন কর কর্মকর্তা বৃন্দ ভালো করে অবহিত থাকেন এবং তা প্রয়োগ করেন। এ কর সংক্রান্ত কাজগুলো সম্পন্ন করেন রাষ্ট্রের আয়কর বিভাগ। আয়কর বিভাগ বা ট্যাকসেশন সার্ভিসের মূল কাজগুলো হলো—করনীতি প্রণয়ন, অফিস ম্যানেজমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন রিসিভ করা, ট্যাক্স রিটার্নের সঠিকতা যাচাই করা, ট্যাক্স রিটার্ন অডিট করে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করা ও যথাযথ কর নির্ধারণ করা, কর জরিপ করা, উৎসে কর কর্তন মনিটরিং করা, চলতি কর, বকেয়া কর ও অগ্রিম কর আদায় করা ইত্যাদি।
কিন্তু দুঃখজনক বা দুর্ভাগ্যজনক যাই বলি না কেন, স্বাধীনতার পর হতে আজ অবধি ৫৪ বছরে বাংলাদেশের আয়কর বিভাগ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কখনও শতভাগ অর্জন করতে পারেনি।
আরও পড়ুন <<>> ফ্যাসিবাদকে না বলুন, জনতার বন্ধু হোন
কর সংক্রান্ত আইনের মারপ্যাঁচ এবং জটিলতা প্রসঙ্গে কিছু টাকা গেলে যাক ঝামেলা থেকে মুক্তি চাই, এ সমস্ত আইন কানুন আমরা কম বুঝি, সেজন্য সরাসরি নিজে না দিয়ে তা আয়কর উকিলের সহায়তা নিয়ে দাখিল করি। এ হলো রাষ্ট্রের একজন কর প্রদানকারী সাধারণ নাগরিকের বক্তব্য।
জনসাধারণের এরকম আইনি অজ্ঞতার সুযোগে কর কর্মকর্তারা তাদেরকে কিছুটা অর্থ ছাড় দিয়ে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করে নিজেরা লাভবান হন। নগণ্য সংখ্যক সৎ কর্মকর্তা যারা এ দায়ে দুষ্ট নন, তাদের কথা আলাদা । যারাই কর দিয়ে আসছেন বিগত দিনগুলোতে, তারা সকলেই এ অবস্থা ভালো করেই অবহিত আছেন। এখন প্রশ্ন হলো এ কর কর্মকর্তা কিভাবে জনসাধারণকে বোঝান। ধরুন আপনার অর্জিত আয় অনুসারে আদায় যোগ্য করের পরিমাণ ১০০ টাকা। আইনের মারপ্যাঁচ সম্পর্কে যেহেতু তারা সিদ্ধহস্ত, তখন তারা আপনার সাথে মীমাংসায় আসতে চায় এভাবে যে, আপনাকে পুরো ১০০ টাকা আয়কর দিতে হবে না, আপনি দিবেন ৫০ টাকা বাকি টাকা আপনার আর আমার মধ্যে ভাগ হবে। এভাবে আয়কর কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে সমঝোতা হয়ে গেলে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় তার ন্যায্য কর আদায়ে। অসাধু কর কর্মকর্তাদের কৃত কাজের জন্য রাষ্ট্রের বার্ষিক বাজেটে সব সময়ই ঘাটতি থেকে যায়। আর সেজন্যই বছর বছর করের বোঝা জনগণের ওপর আরো বেশি বেশি করে চাপতে থাকে। (চলবে,,,,,)
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।