ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর প্রশ্নে বিএনপির ভাবনা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে বিএনপির একটি সাম্প্রতিক ঘোষণা। দলটি জানিয়েছে তাদের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ‘ক্লিন ইমেজ’ বা স্বচ্ছ রাজনৈতিক ভাবমূর্তি থাকতে হবে।
এ ঘোষণাকে নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক বলা যায়। তবে এটি যেন শুধু বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং বাস্তবতায় রূপ নেয় এটাই এখন দেশের সচেতন জনগণের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা সময়েই দেখা গেছে দুর্নীতি, দলবদলের সংস্কৃতি এবং জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের আধিপত্য। ফলে রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বারবার ক্ষুণ্ন হয়েছে। মনোনয়নপ্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় টাকা ও তদবিরের অভিযোগও বহুবার উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে, বিএনপি যদি সত্যিই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন প্রার্থী মনোনীত করে যারা জনমানুষের প্রতিনিধিত্বের যোগ্য, তা হলে সেটি শুধু দলটির ভাবমূর্তিই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকেও এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৭২ শতাংশ নাগরিক রাজনীতিকদের ‘সততা’কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হিসেবে বিবেচনা করেন। তরুণ ভোটারদের ৬১ শতাংশ মনে করেন, রাজনীতিতে দুর্নীতির প্রভাব সবচেয়ে নেতিবাচক। এই তথ্যগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, জনগণের প্রত্যাশা একটি স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক এবং যোগ্যতানির্ভর নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী রীয়াজ যথার্থই বলেছিলেন— প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াই বলে দেয় একটি দল আসলে কেমন রাষ্ট্র চায়।
আরও পড়ুন <<>> বড়াইবাড়ি সীমান্তে বিজয়, ভেতরে ধ্বংস: বিডিআরের শেষ অধ্যায়
এ বক্তব্য বিএনপির মতো একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। দলের দীর্ঘ আন্দোলন ও রাজনৈতিক লড়াইকে জনগণ যদি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে, তাহলে প্রার্থীর রাজনৈতিক ও পেশাগত যোগ্যতা যাচাইয়ে দলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে বাস্তবতা বলছে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। দলের অনেক নেতা রয়েছেন, যাদের বাদ দিলে সাংগঠনিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তদুপরি, স্থানীয় পর্যায়ের গোষ্ঠীগত রাজনীতি ও প্রভাবশালীদের চাপও উপেক্ষা করা সহজ নয়। তাই ‘ক্লিন ইমেজ’ নিশ্চিত করার এ প্রয়াস হবে দলের জন্য এক ধরনের সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার পরীক্ষাক্ষেত্র।
বর্তমানে দেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনআস্থা পুনঃস্থাপন। এ আস্থা ফিরিয়ে আনার পথ শুরু হতে পারে এমন একটি নেতৃত্বের মাধ্যমে, যারা সৎ, জনবান্ধব এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী। বিএনপি যদি এ পথে নির্ভিকভাবে এগিয়ে যায়, তাহলে তা শুধু দলটির রাজনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করবে না, বরং জাতীয় রাজনীতিতেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসবে।
লেখক:
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক।