প্রভাবমুক্ত আইনের প্রয়োগই শান্তির সোপান

গতকাল মহানগরীতে ঘটে যাওয়া দু'দুটি ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল জনগণের কাঙ্খিত আশা পূরণ সাপেক্ষে সাধুবাদ প্রাপ্ত হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সহিত পেশাদারিত্ব বজায় রেখে তড়িৎ ব্যবস্থা নিলে যে প্রচলিত আইনেই রাষ্ট্রে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব, তা পুরোপুরি প্রমাণ করেছে।
প্রশাসন চাইলে কি না পারে, তা আজ প্রমাণিত হলো গাবতলী গরুর হাট অবৈধ দখলদার মুক্ত করার মাধ্যমে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়ত্বাধীন গাবতলী গরুর হাটের ইজারা সর্বোচ্চ দরদাতা কে দেয়া হয়নি বরং স্থানীয় প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার ইশারায় তার সাঙ্গোপাঙ্গরা হাট দখল করে নেয়। সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর তৎপর হয়ে ওঠে এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গতকাল গাবতলী গরুর হাট দখলদার মুক্ত করে।
প্রথম ঘটনাটি- দেশ টিভির অনুসন্ধান বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দরপত্রে পঞ্চম হয়েও বিএনপি নেতা এস এ সিদ্দিক সাজুর হয়ে হাটটি দখলে নিয়েছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা সাজু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। আবার নীতিমালা ভঙ্গ করে খাস আদায়ের নামে এমন দখলকেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে খোদ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অন্যান্য দরদাতারা। সংবাদকর্মীরা হাসিল ঘরে হাসিল তুলছে কারা এরা, জানতে চাইলে, দখলদারদের তরফ থেকে নিজেরাই জানান যে, ইজারাদার নেই, তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন গরুর হাট। নিয়ন্ত্রণের নামে দখলের নেতৃত্বে উঠে আসে বিএনপি নেতা সোহেল রহমানের নাম।
অবশেষে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের মুক্ত করতে সমর্থ্য হয়। যা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে আমরা সবাই জানতে পারি।
আরও পড়ুন <<>> চাকরির লড়াইয়ে চিন্তার মৃত্যু কি অনিবার্য?
দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনা- রাজধানীর কলাবাগান থানার স্থানীয় এক বাসিন্দা ওয়াদুদ সাহেবের বাসায় গিয়ে এক এএসআই সহযোগে থানার ওসি সাহেব স্বয়ং তার নিকট ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, সন্ত্রাসীদের নিয়ে গভীর রাতে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগে রাজধানীর কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান ও এসআই বেলাল হোসেনকে প্রশাসনিক কারণে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
লোভী রাজনীতিবিদ এবং কায়েমি স্বার্থবাদী স্বার্থপর অদেশপ্রেমিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমলা বৃন্দের যোগ সাজসে বিগত দশকের পর দশক ধরে এদেশে কঠিন আইন থাকলেও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের তেমন একটা বিচার হতে দেখা যায়নি। সর্বদাই তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আইনের সঠিক গতিকে চলমান রাখতে বাধাগ্রস্ত করতেন।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করলে যা হতে পারে তার যার জাজ্বল্যমান উদাহরণ গতকালের দুটি ঘটনা। এ দুটি ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সদিচ্ছা এবং আইনের সঠিক ও তাৎক্ষণিক প্রয়োগের মাধ্যমে অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় দফতর পরিদফতর গুলো সঠিক সময় সঠিক কাজটি করতে পারে। জনগণের বন্ধু হিসেবে এভাবে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারে, জনতা এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা হতে পারে। সাধুবাদ জানাই এ মহতী সুন্দর কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা তারা সকলকে।
দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনীর বহু বহু সদস্য দীর্ঘদিন একই কাজে অভ্যস্ত থাকায় বর্তমান গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও তাদের কেউ কেউ এরকম অপকর্ম করে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। এর একমাত্র কারণ বাহিনীর আইনি সুরক্ষার জন্য। কারণ তারা জানেন যে, তাদের কৃত অপরাধের জন্য তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে, তারপরে সময়ের আবর্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
বিভাগীয় আইনের রক্ষাকবচ খাটিয়ে তাদেরকে সুরক্ষা না দিয়ে যদি প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচার করা যেতো, তাহলে এগুলি রোধ করা সম্ভব হতো বলে জনগণের অনেকেরই বিশ্বাস। এছাড়াও সাধারন মানুষের প্রচলিত আইনে যে শাস্তি হয়, পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্য একই অপরাধ করলে তাদের শাস্তিও অন্ততপক্ষে অনুরূপ হওয়া দরকার, যদিও তাদের শাস্তি বেশি হওয়া দরকার ছিলো কেননা তারা আইনের লোক।
পরিশেষে আশা করবো বর্তমান সময় যে সংস্কার কমিশন কাজ করছে, তাদের দ্বারা আইনের সুন্দর সংস্কার কার্য সম্পন্নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।