Sobar Desh | সবার দেশ আবু ইউসুফ


প্রকাশিত: ০০:০৯, ২১ জুন ২০২৫

আপডেট: ০০:১৪, ২১ জুন ২০২৫

নিষিদ্ধ বয়ান

ফেব্রুয়ারির ভোট আলোচনা ও বিভ্রান্তির রাজনীতি: নিশ্চিত নির্বাচন, না কৌশলগত চাপ?

জনগণ চায় একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নির্বাচন। শুধু সময় বা তারিখই জনগণের কাছে মুখ্য নয়—বরং নির্বাচন যেনো কোনও কৌশলগত প্রতারণা না হয়, সেটিই তাদের প্রধান চাওয়া।

ফেব্রুয়ারির ভোট আলোচনা ও বিভ্রান্তির রাজনীতি: নিশ্চিত নির্বাচন, না কৌশলগত চাপ?
ছবি: সবার দেশ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লন্ডন বৈঠক এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছে। বহুল প্রতীক্ষিত ও বহুচর্চিত এ সংলাপ নিয়ে যেমন উত্তেজনা ছিলো, তেমনি ছিলো প্রত্যাশার পাহাড়সম চাপ। অবশেষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং উভয় পক্ষই প্রকাশ্যে এটিকে সফল বলেছেন। দেশবাসীও আপাতত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

বিশেষ করে তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে সরাসরি ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক এবং পরবর্তীতে ব্রডার কনসালটেশন পর্ব এ বার্তাই দিচ্ছে যে, এ সংলাপ কেবল প্রতীকী কিছু ছিলো না—বরং বাস্তবধর্মী কিছু লক্ষ্যপূরণে আগ্রহী দুটি পক্ষের মধ্যে বাস্তব এক সমঝোতার চেষ্টা ছিলো।

একমুখী আলোচনার ছাপ

লন্ডন বৈঠক নিয়ে আলোচনা যতটা ছিলো, ফলাফল ততটাই সীমিত। বৈঠক ঘিরে সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা ছিলো—শুধু নির্বাচন নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির বহুল প্রতীক্ষিত কাঠামোগত সংস্কার ও ‘জুলাই সনদ’-এর বাস্তবায়নের পথে দৃশ্যমান অগ্রগতির ঘোষণা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, মিডল ক্লাস ও একাডেমিক বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ চাইছিলো রাজনীতিতে ন্যূনতম শুদ্ধি, দায়বদ্ধতা ও দূষণমুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট বার্তা।

কিন্তু বৈঠক পরবর্তী যৌথ ব্রিফিং ছিল শুধুই ‘নির্বাচন’ কেন্দ্রীক। সেখানে ফেব্রুয়ারির ভোটের কথা বলা হলেও তা যে ‘শর্তসাপেক্ষ’ ছিলো, সে গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে গেছে। তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করা হলেও, প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেছেন যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও আইনি কাজ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়—তবেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব হবে।

পরিকল্পনা না চাপ তৈরির নেপথ্য

এ 'যদি' কথাটি কিন্তু সংলাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক দিক। একটি নির্বাচন আয়োজন শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয় নয়—এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে হাজারো বাস্তবতা: আইনগত প্রস্তুতি, প্রশাসনিক কাঠামো, নিরাপত্তা বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতির সময়সীমা।

আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের বয়ান: সত্যের মুখোশে ষড়যন্ত্রের ছায়া

তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, দেশি-বিদেশি কিছু মিডিয়া এবং একাংশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ শর্তসাপেক্ষ সম্ভাবনাটিকে 'চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত' রূপে তুলে ধরছেন। কিছু সংবাদমাধ্যম তো সরাসরি ১০ ফেব্রুয়ারি বা ১২ ফেব্রুয়ারির মতো নির্দিষ্ট তারিখও দিচ্ছেন—যেন নির্বাচনের দিনক্ষণ অলরেডি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে!

এ ধরনের প্রচারণা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, কৌশলগতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে। কারণ যদি কোনও কারণে নির্বাচনের তারিখ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি না হয়ে এক বা দুই সপ্তাহ পরে হয়—তখনই বলা শুরু হবে, ‘সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, সমঝোতা মানেনি।’ এটি সরকারকে একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলবে, আর সে সুযোগে বিরোধী পক্ষ 'নৈতিক বিজয়' দাবি করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইবে।

সংলাপের সততা বনাম মিডিয়ার স্পিন

লন্ডন বৈঠকে কোন বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে, তা নিয়ে পুরো জাতি আগ্রহী। যদি সত্যিই শুধু নির্বাচন নিয়েই আলোচনা হয়ে থাকে—তাহলে সেটিও স্পষ্ট করে বলা দরকার। আর যদি ‘নির্বাচনের পূর্বশর্ত’ হিসেবে সংস্কার, রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি, অন্তর্বর্তী প্রশাসনের রূপরেখা ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে—তাহলে সেগুলো নিয়েও জনগণকে জানানো দরকার।

একটি বিষয় এখন পরিষ্কার যে, লন্ডন বৈঠকের সাফল্যকে ব্যবহার করে একটি অংশ মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে এমন একটি বিবরণ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সরকারকে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী’ হিসেবে আখ্যা দেয়া সহজ হয়।

জনগণ কী চায়?

জনগণ চায় একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নির্বাচন। শুধু সময় বা তারিখই জনগণের কাছে মুখ্য নয়—বরং নির্বাচন যেনো কোনও কৌশলগত প্রতারণা না হয়, সেটিই তাদের প্রধান চাওয়া। আর এ চাহিদা পূরণে রাজনীতিকদের আন্তরিকতা, মিডিয়ার সততা ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সুসংগঠিত প্রস্তুতি—এ তিনটি বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

পরিশেষে

ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে বলা যাবে না। এটি একটি সম্ভাব্য সময়সীমা—যা অনেকগুলো বাস্তবতা ও শর্তের ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বাস্তবতা বোঝা জরুরি এবং মিডিয়াকে দায়িত্বশীলভাবে সে বাস্তবতাকেই সামনে আনা উচিত।

জনগণের আশার প্রতীক হয়ে ওঠা এ সংলাপকে যেন কেউ নিজের মতলব হাসিলে বিকৃত না করে। সত্য, স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগী প্রস্তুতির মাধ্যমেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে। আর সেটি হবে দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন সূচনা।

লেখক ও সংবাদকর্মী

সম্পর্কিত বিষয়:

শীর্ষ সংবাদ:

পাঁচ অস্ত্রসহ গ্রেফতার লিটন গাজী সম্পর্কে সব জানালো পুলিশ সুপার
আনসার ভিডিপি ব্যাংকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ব্যবস্থাপক গ্রেফতার
লালমনিরহাটে স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের যাবজ্জীবন
ভোলাহাটে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু
সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দালাল চক্রের খপ্পরে
বাংলাদেশ সীমান্তে পঁচছে ৩০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ
সুদের টাকার জন্য নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার-১
ইমরান খান বেঁচে আছেন, দেশ ছাড়তে চাপ: পিটিআই
হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের প্লট দুর্নীতি মামলার রায় আজ
শুরু হলো বিজয়ের মাস
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত
খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে হাসপাতালে জামায়াত সেক্রেটারি
স্কুল ভর্তির লটারি ১১ ডিসেম্বর
বিডিআরকে দুর্বল করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাতেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড
ছয় উপসচিবের দফতর পরিবর্তন