তোপের মুখে এনবিআর, বিব্রত সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা

দেড়িতে হলেও এবার এনবিআর এ ষড়যন্ত্রকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর তোপ দাগাচ্ছেন সরকার। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরও এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া অবস্থান থামেনি। তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসর, একজনকে বরখাস্ত এবং একের পর এক দুর্নীতির অনুসন্ধানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এনবিআরের ভেতরে।

সরকারের এ অবস্থানে বিব্রত হয়েছেন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা, যারা সুপরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে শেষে পরিস্থিতি বুঝে মধ্যস্থতায় নেমেছিলেন।

সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনবিআরের সদস্য (কর) আলমগীর হোসেন, সদস্য (শুল্কনীতি ও আইসিটি) হোসেন আহমদ, সদস্য (মূসক নীতি) আবদুর রউফ এবং বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মো. শব্বির আহমেদকে বুধবার (২ জুলাই) অবসরে পাঠানো হয়। সরকারের ভাষায়, ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ হওয়ায় জনস্বার্থে তাদের অবসর দেয়া হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বরখাস্ত হন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন। অভিযোগ, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে তিনি ২৮ ও ২৯ জুন বন্দর বন্ধ রাখেন, যার ফলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বড় ক্ষতি হয়।

এদিকে দুদক ইতিমধ্যে এনবিআরের তিন সদস্যসহ অন্তত ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে। এতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সরকারের আশ্বাসেই তারা এগিয়ে এসে আন্দোলন বন্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বন্দর অচল করে আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছিলো না, তাই ব্যবসায়ীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন। সরকার তখন বলেছিলো, আন্দোলন বন্ধ হলে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। কিন্তু এখন সরকার উল্টো পথে হাঁটছে, এতে আমরাও বিব্রত।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, কর্মকর্তাদের ওপর এভাবে দমনপীড়ন মনোবল ভেঙে দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আন্দোলনকারী কর্মকর্তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, সরকারের আশ্বাসে ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলেও এখন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভাগ করে দেয়ার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শেষ পর্যন্ত ২৯ জুন রাতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সবাই কাজে ফেরেন। কিন্তু আন্দোলন বন্ধের পরও সরকার কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসছে না।

ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারের উচিত ছিলো মধ্যস্থতাকারীদের সম্মান রক্ষা করা এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পদক্ষেপ নেয়া। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট এখন আরও জটিল আকার নিচ্ছে।

সবার দেশ/কেএম