বুধবার ছিলো যেন আন্দোলনের নগরী
দাবি আদায়ের রাজধানী ঢাকা

রাজধানী ঢাকার চেনা চিত্র যেনো গতকাল বুধবার হঠাৎই পাল্টে গেলো। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলন, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো শহর। একদিকে শিক্ষার্থী, অন্যদিকে পেশাজীবী—সব মিলিয়ে এদিনের ঢাকা ছিলো দাবি আদায়ের এক যৌথ উচ্চারণে সরব, তবে একই সঙ্গে যান্ত্রিক জীবনযাত্রার ওপর চাপিয়ে দেয় নিদারুণ দুর্ভোগ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লংমার্চ: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
দিন শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির লংমার্চ দিয়ে। বেলা সাড়ে ১১টায় পুরান ঢাকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাত্রা শুরুর পর শাহবাগ ও কাকরাইল এলাকায় পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে কাকরাইল মসজিদের সামনে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে মৎস্য ভবন মোড়েও। এর ফলে পল্টন, প্রেসক্লাব, মতিঝিল, শাহবাগসহ আশপাশের প্রায় সব এলাকায় যান চলাচল অচল হয়ে পড়ে।
ছাত্রদলের প্রতিবাদে উত্তপ্ত ঢাবি
একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও উত্তেজনা। ছাত্রদল নেতা সাম্যর হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রদল। এতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কগুলোয় যান চলাচল ব্যাহত হয়, যার প্রভাব পড়ে নিকটবর্তী এলাকায়ও।
নার্সিং শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে ‘অচল’ শাহবাগ
দুপুর ২টার দিকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীরা তাদের ডিগ্রিকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতির দাবিতে শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। শাহবাগ হয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে চাপ পড়ে সায়েন্সল্যাব, কাঁটাবন, হাতিরপুল, চাঁনখারপুল, গুলিস্তানসহ পুরো মধ্য ও দক্ষিণ ঢাকায়।
অফিস ফেরত মানুষের দুর্ভোগ
বিকাল ৫টার পর যখন সরকারি ও বেসরকারি অফিসের ছুটি হয়, তখন রাজধানীজুড়ে যানজট যেন স্থবির করে তোলে নগরজীবন। অনেকে বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে অবশেষে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দেন। মেট্রোরেলেও মানুষের চাপে নাভিশ্বাস উঠে যায়।
বিক্ষোভ নগর ভবনের সামনেও
সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার দাবিতে তার অনুসারীরা ডিএসসিসি ভবন ঘেরাও করেন। সাময়িকভাবে নগর ভবনের সামনের সড়ক বন্ধ হয়ে পড়ে।
শহরজুড়ে স্থবিরতা, ক্ষোভ ও প্রশ্ন
এ দিন প্রেসক্লাবের সামনে আটকে থাকা সাভার পরিবহনের হেলপার মিরাজউদ্দিন কিংবা কলাবাগান থেকে সায়েন্সল্যাবে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে মালিবাগের পথে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা সেলিম—তারা শুধু ব্যক্তিগত দুর্ভোগই নয়, বরং এক ভঙ্গুর নগর ব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
দাবি-আন্দোলনের ঢাকা, কিন্তু দিশাহীন নাগরিক জীবন
রাজধানীতে একদিনে একাধিক দাবিতে সংঘটিত আন্দোলন ও অবরোধ যে কেবল রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বার্তা দেয় তা নয়—এটি ঢাকার নাগরিকদের নিত্যদিনের জীবনে কতটা গভীর ছাপ ফেলে, তাও স্পষ্ট করে। একটি কার্যকর সমন্বয়হীনতায় ঢাকার মানুষ বারবার আটকে পড়ছে নাগরিক জঞ্জালে, আর প্রশাসন ব্যস্ত থাকে তা ঠেকাতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে—স্থায়ী সমাধান নয়।
ঢাকা এখন আর শুধু রাজধানী নয়, এ যেন হয়ে উঠেছে দাবি আদায়ের রণক্ষেত্র—যেখানে প্রতিবাদের শব্দ আছে, কিন্তু সমাধানের ছায়া দুর্লভ।
সবার দেশ/কেএম