সংসদ ভবনের সামনে রণক্ষেত্র
পুলিশের লাঠিচার্জে পড়ে গেল ‘জুলাই যোদ্ধার’ কৃত্রিম হাত
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার দুপুরে ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ‘জুলাই যোদ্ধা’দের সঙ্গে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বহু আন্দোলনকারী, ভাঙচুর হয়েছে পুলিশের গাড়িও। বিশৃঙ্খলার একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এক জুলাই আহত যোদ্ধার কৃত্রিম হাত—যা মুহূর্তেই প্রতীকে পরিণত হয় আন্দোলনের নির্মমতার।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে সংঘর্ষের এ ঘটনাটি ঘটে সংসদ ভবনের মূল ফটকের সামনে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুপুর দেড়টার দিকে তিন দফা দাবিতে দক্ষিণ প্লাজায় অবস্থান নেন ‘জুলাই আহত’ যোদ্ধারা। তারা সেখানে সরকারের কাছে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ‘জুলাই সনদ’-এর বাস্তবায়নের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সংসদ ভবনের গেটের দিকে এগিয়ে যান এবং ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, পরে তা পরিণত হয় লাঠিচার্জে। পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
লাঠিচার্জের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যান অনেকেই। এ সময় এক ‘জুলাই যোদ্ধা’র শরীরে লাগানো কৃত্রিম হাতটি খুলে রাস্তায় পড়ে যায়। লাঠিচার্জে মারাত্মকভাবে আহত ওই যোদ্ধা হাতটি ফেলে রেখে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন জুলাই আন্দোলনে আগেই পা ও হাত হারানো কয়েকজন প্রতিবন্ধী যোদ্ধা। আহতদের অনেককেই ঘটনাস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দেখা যায় সহযোদ্ধাদের।
ছত্রভঙ্গ হওয়ার পরও আন্দোলনকারীদের একটি অংশ সংসদ এলাকার ভেতরে টিয়ারশেলের ধোঁয়া উপেক্ষা করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও ধাওয়ার মুখে তারা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েন। এরপর সংসদ দক্ষিণ প্লাজার সামনে জুলাই সনদ অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত একটি বুথে আগুন ধরিয়ে দেয় কিছু আন্দোলনকারী।
দুপুর ২টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আবারও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় সংসদ ভবনের চারপাশে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এলাকা। সংঘর্ষ শেষে জুলাই যোদ্ধাদের একটি দলকে আসাদগেটের দিকে অবস্থান নিতে দেখা যায়, আর সংসদ মোড়ে মোতায়েন থাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য।
পুলিশ জানায়, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বনিম্ন শক্তি ব্যবহার করেছে। তবে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়া হয়।
সংসদ ভবনের সামনে রণক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি শেষে এখন প্রশ্ন উঠেছে—জুলাই আহতদের ন্যায্য দাবি নিয়ে এ সংঘর্ষ কেন এমন পরিণতি নিল, আর তাদের কৃত্রিম হাতটি ফেলে যাওয়া সেই যোদ্ধা আজ কোথায়?
সবার দেশ/এফও




























